ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

'মার্কিন সমাজে বিভক্তি এবং মতভেদ চরম আকার ধারন করেছে'


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১৪ জুন, ২০২২, ০৩:০৬ পিএম

'মার্কিন সমাজে বিভক্তি এবং মতভেদ চরম আকার ধারন করেছে'

'মার্কিন সমাজে বিভক্তি এবং মতভেদ চরম আকার ধারন করেছে'

আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মার্কিন দৈনিক টাইমস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মার্কিন সমাজ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সমাজ যেভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এখনকার পরিস্থিতি তার চেয়ে বেশি কিনা-এ বিষয়ে হেনরি কিসিঞ্জারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অবশ্যই মার্কিন সমাজে আজকের বিভক্তি ভিয়েতনাম যু্দ্ধের সময়কার পরিস্থিতির সাথে তুলনীয় নয় বরং তার চেয়ে বেশি। কিসিঞ্জার আরো বলেন, সত্তর দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমন্বয় বজায় ছিল। তখন মার্কিন স্বার্থ নামক এ বিষয়টি সবার কাছে অর্থবোধক ছিল এবং মোটেই তা দরকষাকষি বা  সন্দেহের  বিষয় ছিল না। 

হেনরি কিসিঞ্জার আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রধান দুই দল ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দলের মধ্যে বিদ্যামান বিরোধ এবং মতানৈক্যের ব্যাপার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এর ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এবং আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে এমনকি আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে দেশটির প্রসাশনের মধ্যে বিভক্তি এবং ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

যেমন বলা যায় যে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোকে সহায়তা এবং সমর্থনের বিষয়ে এমন একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিলেন যা আগে এটা আমেরিকায় কল্পনা করা যেত না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনামুলক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আটলান্টিকের দুই তীরের মধ্যে অভূতপূর্ব বিচ্ছিন্নতা এবং  মতবিরোধের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকাকে অপব্যবহার করার কারনে ইউরোপের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য  যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ন্যাটোর অস্তিত্বের দর্শনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে  ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর তার আর্থিক বোঝা হ্রাস এবং পশ্চিমা সামরিক সংস্থাকে অর্থায়নে ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ন্যাটো বিষয়ে সম্পূর্ণ ট্রাম্প-বিরোধী  নীতি গ্রহণ করেছে  এবং এ সংস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।  

এছাড়া অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে গর্ভপাত এবং অবৈধ অভিবাসীদের চিকিৎসাসহ তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার এবং নির্বাচনী আইন সংশোধন এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহনের উপর বিধিনিষেধসহ আরো অনেক বিষয়ে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক সহযোগিতা এবং সমর্থন, মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী আন্তর্জাতিক শক্তি যেমন রাশিয়া ও চীনকে মোকাবিলার প্রকৃতি ও পদ্ধতি, ইরানের পরমাণু সমঝাতা ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট। পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে ইয়েমেনের যুদ্ধ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সে বিষয়েও মার্কিন রাজনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে মতবিরোধ তু্ঙ্গে উঠেছে। এ কারণে হেনরি কিসিঞ্জার মনে করেন, মার্কিন সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে  তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘাতের মধ্যে রয়েছে।   

পরিশেষে ইউক্রেনের বর্তমান সংকট এবং এটি ওয়াশিংটন কিভাবে মোকাবেলা করবে সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে মার্কিন প্রশাসনে চলমান বিরোধ এবং মতানৈক্য আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিও বাইডেন প্রশাসনের সরকারি নীতি হল রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাপক আর্থিক, সামরিক এবং অস্ত্র সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা কিন্তু এই নিয়েও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যু্দ্ধে জয়লাভের বিষয়ে খোদ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে পর্দার আড়ালে চরম বিতর্ক চলছে এবং তা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে।।খবর পার্সটুডে /এনবিএস/২০২২/একে