ঢাকা, শনিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৪ | ১০ কার্তিক ১৪৩১
Logo
logo

দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপী, অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার-বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ

১৬ জুলাই দুদক অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক     প্রকাশিত:  ০২ জুলাই, ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম

দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপী, অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার-বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ

দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট,অর্থ পাচার, খেলাপীঋণ-ব্যাংক ডাকাতি রোধ; কালো টাকা, খেলাপীঋণ ও পাচারের টাকা উদ্ধার ; আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত; দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপী, অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার-বিচারের দাবিতে এবং ফ্যাসিবাদী সরকার উচ্ছেদের লক্ষ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলসহকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে যাওয়ার সময় পল্টন মোড়ে পুলিশ বেরিকেড দিলে সেখানে রাজপথে অবস্থান নিয়ে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড শাহীন রহমান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবীর জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড রাশেদ শাহরিয়ার ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য কমরেড খালেকুজ্জামান লিপন।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের ছত্রছায়ায় দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপীর মাত্রা অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর সরকারের উচ্চ পদে থাকা অবস্থায় রিসোর্ট, জমি, ফ্লাট বাড়ী, নগদ অর্থসহ বিপুল অর্থ বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে। একদিকে শুদ্ধাচার পুরষ্কার ও বিপিএমসহ একটার পর একটা খেতাব পাচ্ছেন, আরেকদিকে অবৈধ সম্পদ বাড়িয়ে চলছেন। সাবেক সেনা প্রধান আজিজ, অবৈধভাবে হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী নিজের ভাইদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা আদায়ে প্রভাব খাটিয়েছে। এমনকি ফিলিস্থিনে ধারাবাহিকভাবে গণহত্যাকারী ইসরাইলের কাছ থেকে স্পাই ওয়্যার নামক আড়িপাতার গোয়েন্দা সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে জেনারেল আজিজ। বেনজীর, আসাদুজ্জামান মিয়া ও ডিআইজি সামছুদ্দোহাসহ সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি অবৈধ সম্পদের খবর পত্রিকায় বের হওয়ায় পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে হুমকী দিয়ে বিবৃতি প্রদান ব্যক্তির দায়কে বাহিনীর কাঁধে টেনে নেয়ার সামিল। যা দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, সচিব মাহমুদ ফয়সলের অবৈধ সম্পদের খবর বের হওয়ার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারী ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সাথে সাথে সামরিক-বেসামরিক আমলাদের অবৈধ সম্পদের খবর। এর আগে করোনার সময়ে রিজেন্ট সাহেদদের ‘কারবার’, স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় মিঠু চক্রের বিপুল দুর্নীতি, ক্যাসিনো সম্রাট-খালেদদের ক্ষমতা আর সম্পদ, যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকান্ড, ফরিদপুরের দুই ভাইয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের খবর, রূপপুরের বালিশকান্ডসহ নানা ধরনের সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, নির্মাণকাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ কান্ডসহ নানা ঘটনা বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের গত তিন মেয়াদে ঘটে চলেছে। সরকার দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’ এ কথা বললেও বাস্তবে সরকারের প্রশ্রয়েই এরা দুর্নীতি করছে। এর কারণ বর্তমান সরকার গত ৩টি নির্বাচনে আমলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় বসেছে। ফলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেনা। এরা একে অপরের সহযোগি। দুর্নীতির কথা উঠলেই মন্ত্রীরা পাল্টা প্রশ্ন করেন ‘পৃথিবীর কোন দেশে দুর্নীতি নেই।’ দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকার উপরে খেলাপী ঋণ রয়েছে। ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে সরকার কোন যৌক্তিক পদক্ষেপ না নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে সুবিধা দিয়ে আসছে। আগে যেখানে ৩০% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপী ঋণ রিসিডিউল করার আইন ছিল, গত মেয়াদে সরকার সেটা পরিবর্তন করে ২% দিলেই ঋণ রিসিডিউল করার সুযোগ দিয়েছে। তারপরও খেলাপী ঋণের পরিমান বেড়েই চলছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন ১ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা। দেশে কালোটাকা অর্থাৎ চুরি, ঘুষ, দুর্নীতির টাকা মোট অর্থনীতির ৮২%। কালোটাকা উদ্ধার না করে এবারের বাজেটেও ১৫% কর দেয়ার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে জায়েজ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হচ্ছে। 

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে ১০টি সমঝোতা স্মারক চুক্তি করেন, যেটি দেশের স্বার্থবিরোধী। ভারতকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেল-ট্রানজিট করিডোর দেয়ার চুক্তি হয়েছে, অথচ ভারত মাত্র ১৮ কিলোমিটার ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ-নেপাল ও ভ‚টানের সাথে বাণিজ্য ও যোগাযোগ করতে পারে। সেটি তারা দিচ্ছে না। রেলে পণ্যের ও যাত্রীর নিরাপত্তার কথা বলে কিংবা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমন বা চীনের সাথে বিরোধে ভারত সামরিক বাহিনী চলাচল ও নিয়োগ করলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এছাড়া তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারত গত ২০১০ সালে থেকে আশ্বাস দিয়ে একের পর এক তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। অথচ আমাদের সাথে তিস্তা চুক্তি করছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত বৈরী আচরণ করছে। 

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, একের পর এক দুর্নীতির খবর বের হওয়ায় দুদক যেন না পারতে অগত্যা লোক দেখানো তদন্ত ও মামলা করছে। কিন্তু দুদক নিজেই খুঁজে দুর্নীতির হোতাদের বের করতে পারছে না। দুদকের উপরও জনগণের আস্থা নাই। কারণ ইতিপূর্বে ইয়াবা বদিসহ বিভিন্ন দুর্নীতিবাজকে দুদক সার্টিফিকেট দিয়ে সাধু বানিয়েছে। এতে করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপের দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ থেকে একই দাবিতে আগামী ১৬ জুলাই ২০২৪ ঢাকাসহ সারাদেশে দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ।