এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট, ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম
জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। ওই আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন।
শেখ হাসিনা (৭৬) আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে গত সপ্তাহে হেলিকপ্টারে করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যান। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাঁর ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।
পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী সে সময় প্রায়ই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা উভয় ক্ষেত্রেই নির্বিচার বল প্রয়োগ করেছে। রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি পাখি শিকারে ব্যবহৃত অস্ত্র, বুলেটসহ নানা রকম প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম ও আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ৬৫০ বাংলাদেশি (প্রথম আলোর হিসাবে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩১ দিনে ৫৮৩ জন) প্রাণ হারিয়েছেন।
‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি আজ শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আজ শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের এই সন্ধিক্ষণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংঘাতের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে।
সংস্থাটি বলছে, প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, গুম, নির্যাতন ও অসদাচরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কঠোর বিধিনিষেধের মতো গুরুতর অভিযোগ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত গণমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, সরকার পতনের পর ৫ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে বিক্ষোভের নতুন ধাক্কায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংস্থাটি আরও বলছে, আন্দোলনে সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশু নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহত হয়েছে হাজারো মানুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে জুলাইয়ে বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের করা এই প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এ বিষয়ে উদ্বেগের প্রাথমিক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। গত জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
তবে এসব তথ্যের বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি ওএইচসিএইচআর। ওএইচসিএইচআর বলছে, ওই সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকা এবং যোগাযোগে বিধিনিষেধের কারণে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতের জন্য এ সুপারিশ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও এসব সুপারিশ করা হবে বলে জানায় ওএইচসিএইচআর। ওএইচসিএইচআর বলছে, মানবাধিকার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তন মাথায় রেখে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে অশোভন আচরণ করা সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেছে আইএসপিআর। কিছু সেনা সদস্যের অশোভন আচরণের বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং দোষী প্রমাণ হলে ওই সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাসদস্য কর্তৃক কতিপয় ব্যক্তির সাথে অশোভন আচরণের কয়েকটি ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই সমর্থন করেনা।
ইতোমধ্যে দোষী সেনাসদস্যদের শনাক্ত করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রাপ্ত দোষী সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।