এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:০৯ পিএম
ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল-২০২৪'। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গই ভারতের প্রথম কোনো রাজ্য, যারা ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও শিশুদের যৌন নিপীড়নবিরোধী কেন্দ্রীয় আইনে সংশোধনীর উদ্যোগ নিল।
আজ (মঙ্গলবার) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্যোগে ‘দ্য অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড বিল ২০২৪’ (ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রিমিনাল ল’জ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৪) বিলটি পাস হয়। বিলটি এখন অনুমোদনের জন্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দেওয়ার পর এটি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করলে তা আইনে পরিণত হবে।
আজ পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে বিলটি উত্থাপন করেন। এরপর বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি অনুরোধ করেন, তিনি যেন বিলটি অনুমোদন করতে রাজ্যপালকে আহ্বান করেন।
বিল পাস করার পর ৩ সেপ্টেম্বর দিনটিকে রাজ্যের নারীদের জন্য ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “মেয়েদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে ৩ সেপ্টেম্বর একটা ঐতিহাসিক দিন। ১৯৮১ সালে এই দিনে মেয়েদের অধিকার সুরক্ষার জন্য ইউনাইটেড নেশন চালু করেছিল নারী বৈষম্য বিরোধী কমিটি। এই দিনের সঙ্গে মিলে যাওয়ার জন্য আমি ইউএনকে ধন্যবাদ জানাই।”
অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ‘‘এই বিল একটা ইতিহাস! প্রধানমন্ত্রী পারেননি। আমরা পারলাম। করে দেখালাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের লজ্জা! উনি মেয়েদের রক্ষা করতে পারেননি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।’’
ইতোমধ্যে রাজ্য বিজেপি বিলটিকে স্বাগত জানিয়েছে। আজ বিধানসভায় আলোচনা করতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, তিনি সাতটি সংশোধনী এনেছেন। তিনিও চান এই বিল পাস হোক। আইনে পরিণত হোক। আলোচনার পর শুভেন্দু অধিকারী আর জি কর কাণ্ড নিয়ে বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন।
পাস হওয়া নতুন সংশোধনী বিলে ধর্ষণের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যু কিংবা কোমায় চলে যাওয়ার ঘটনায় ধর্ষকের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। যিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তাঁর নাম প্রকাশ, ধর্ষণ মামলায় অনুমতি ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়ার বিবরণ প্রকাশ হলে তিন থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
১৬ বছরের কম বয়সী নারীকে ধর্ষণ করলে ন্যূনতম সাজা ২০ বছর কারাদণ্ড কিংবা আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সী কাউকে ধর্ষণ করলে ন্যূনতম ২০ বছর কিংবা আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা কিংবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বিলে। আর ১৮ বছরের কম বয়সী নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলে তাঁর সাজা হবে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও জরিমানা অথবা মৃত্যুদণ্ড।
৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে কার্যত রাস্তায় নেমেছিল প্রায় গোটা শহর। রাজ্যের নানা প্রান্তসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে
খবর পার্সটুডের