এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। নেতাকর্মীরা অপরাধ করলেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটিতে দুজন নেতার অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে শোকজ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন দলের অবস্থান। গত ৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত সারাদেশে দেড় শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার এবং অসংখ্য নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।
তারেক রহমান বলেছেন, আপনারা পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফলতায় নিতে হলে কেউ দখলদারি কাজে লিপ্ত হবেন না, সহায়তাও করবেন না। কেউ আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২০১৫ সালের ১০ মে রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি ভবন থেকে তাকে গুম করা হয়। ৩২ দিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের গলফ কোর্স ময়দান থেকে উদ্ধার হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ৯ বছর পর সম্প্রতি দেশে ফেরেন তিনি।
এস আলমের গাড়িতে চড়ে কক্সবাজারে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সংবর্ধনা নিতে যান সালাহউদ্দিন। এই নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হলে তাকে শোকজ করেন তারেক রহমান।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলেন তারেক রহমান। সেখানেই এস আলমের গাড়িতে চড়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। তারেক রহমানের নির্দেশে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সংক্রান্ত চিঠি তার কাছে পাঠিয়ে দেন। চিঠিতে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিন্ন ঘটনা-বিতর্কিত একজন ব্যবসায়ী সঙ্গে বৈঠক করায় শোকজ করা হয়েছে ডাকসুর সাবেক জিএস এবং বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকেও।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিতর্কিত ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করায় শোকজ করা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে। চিঠি পাওয়ার পর জবাবও দিয়েছেন খোকন।
বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের বিলাসবহুল ১৪টি গাড়ি নিজের কব্জায় নেওয়ায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, দলের নীতিপরিপন্থি বক্তব্যসহ নানা অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকের পদাবনতি, পদস্থগিতসহ নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি পাওয়া নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছেন ঢাকা মহানগর, বগুড়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, পঞ্চগড়, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট ও লক্ষ্মীপুর জেলার। এ ছাড়া বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সাংগঠনিকভাবে শাস্তির কবলে পড়া নেতাদের মধ্যে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে পদাবনতি করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
পুকুর দখলের ঘটনায় বিলকিস জাহান শিরিনকে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ফরিদপুরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় শামা ওবায়েদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের পদ জাতীয়বাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক পদ স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোনো স্তরেরই অন্য দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না।