এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:০৯ পিএম
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘হত্যা, গুম, গণহত্যা, নির্যাতনের’ অভিযোগে একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে। এসব মামলায় তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আসামি করা হচ্ছে।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এখন জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদে কর্মরত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ওই সংস্থার কাজে বাংলাদেশ সফরে এলে তাকেও কি সেসব মামলায় গ্রেফতার করা হতে পারে?
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এই মুহূর্তে জাতিসংঘের সংস্থা ডব্লিউএইচওর (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক। আর সেই সুবাদে তার কার্যালয় এখন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে।
ডব্লিউএইচওর এই আঞ্চলিক পরিচালক পদের মেয়াদ পাঁচ বছরের। ফলে ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত সায়মা ওয়াজেদের এই পদে থাকার কথা।
তবে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান– তার মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশসহ মোট ১১টি দেশ আছে, আর রিজিওনাল ডিরেক্টরকে এই দেশগুলোতে নিয়মিতই সফর করতে হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, গত ৫ আগস্ট যখন তার মা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজে থাইল্যান্ড সফরে ছিলেন।
আবার দিল্লি ফিরে এসেও তিনি বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) তার অঞ্চলের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কমিটির ৭৭তম অধিবেশনের প্রস্তুতি বৈঠকেও বসেন। সেই বৈঠকে যথারীতি বাংলাদেশের প্রতিনিধিও যোগ দিয়েছিলেন।
সোজা কথায়, সায়মা ওয়াজেদকে যে দেশগুলো নিয়ে কাজ করতে হয় বাংলাদেশ তার অন্যতম এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ডব্লিউএইচওর অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সদস্য।
তবে দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছেন, রিজিওনাল ডিরেক্টরকে অচিরেই সংস্থার কাজে বাংলাদেশে যেতে হবে, এখনই এরকম কোনও নির্ধারিত পরিকল্পনা নেই। তবে যেকোনও সময়ই যেতে হতে পারে, এতেও কোনও ভুল নেই! কিন্তু এখন যেহেতু সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে, তাকে যদি আগামী দিনে ‘অফিসের কাজে’ সে দেশের মাটিতে পা রাখতে হয়, তখন কি বাংলাদেশ সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে?
জাতিসংঘের একটি সংস্থায় অত্যন্ত উঁচু পদে কাজ করেছেন, দিল্লিতে এমন একজন সাবেক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, জাতিসংঘ বা তার সহযোগী সংস্থায় কর্মরত হিসেবে কোনও ব্যক্তি যখন কোনও দেশে সফরে যান, তখন সেই ‘ডিউটি ট্রিপে’ তারা কিছু ‘আইনি রক্ষাকবচ’ও পেয়ে থাকেন।
তিনি বলছেন, বস্তুত জাতিসংঘ বা তার সহযোগী সংস্থায় (যেমন ডব্লিউএইচও, ইউনেসকো ইত্যাদি) কর্মরত ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন আছে– বাংলাদেশসহ সব সদস্য দেশ যে সনদ পালন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ওই সনদের ৮ নম্বর আর্টিকেলে পরিষ্কার বলা আছে, যদি না ওই দেশের সঙ্গে কোনও ‘স্ট্যাটাস-অব-ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট’ থাকে, তাহলে জাতিসংঘ বা সহযোগী সংস্থার কোনও কর্মী কোনও দেশে গেলে কর্তব্যরত অবস্থায় যদি তাদের আটক করাও হয়– তাহলে তাদের পরিচয় শনাক্ত হওয়া মাত্র তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের কোনও রকম জিজ্ঞাসাবাদ করাও যাবে না। ওই দেশ সঙ্গে সঙ্গে তাদের জাতিসংঘ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতেও বাধ্য থাকবে।
এখন প্রশ্ন হলো, ডব্লিউএইচওর রিজিওনাল ডিরেক্টর হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ যদি আগামী দিনে বাংলাদেশ সফরে আসেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে সরকার কী ভূমিকা নেবে? তখন কি তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো উপেক্ষা করা হবে, নাকি দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
এর জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘জাতিসংঘে কর্মরত কর্মকর্তারা জাতিসংঘের সুবিধাপ্রাপ্তি ও দায়মুক্তির সনদ এবং ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১ অনুযায়ী সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে জাতিসংঘের সুবিধাপ্রাপ্তি ও দায়মুক্তির সনদের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ইউএন সিস্টেমে কাজ করেন এমন কেউ তার নিজ দেশে দায়মুক্তি পাবেন না।’
আপসযেহেতু সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ফলে তিনি ডব্লিউএইচওর হয়ে এ দেশে আসতে পারবেন, কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী সুবিধা পেলেও দায়মুক্তি পাবেন না বলে জানান তিনি।