এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
গাজায় দখলদার ইসরাইলের নজিরবিহীন অপরাধযজ্ঞের ফলে ৪২ হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। এটা খাতাপত্রের হিসাব। তবে ব্যাপকভাবে অনুমান করা হয়, শহীদের প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।
গত এক বছরে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী দফায় দফায় পশ্চিম তীরেও হামলা চালিয়ে সেখানকার প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিকে শহীদ করেছে। গত মাসে ইসরাইল লেবাননে তাদের সহিংস আক্রমণ বাড়িয়েছে। সেখানে শুধু ২৩ সেপ্টেম্বরে হামলায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। দুই সপ্তাহে দখলদার ইসরাইল লেবাননের দুই হাজারের বেশি মানুষকে শহীদ করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার পুরো বসতি এলাকা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। তারা বুলডোজার দিয়ে রাস্তা খুঁড়ে, অবকাঠামো ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বোমা মেরে ধ্বংস করেছে।
আবাসিক ভবনগুলোকে তারা পিষে ফেলেছে। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। পানি সরবরাহ কেন্দ্র, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সৌর প্যানেলগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। এককথায় ইসরাইল গাজায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।
গাজার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় লেবাননকেও একই পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে মানবতাবিরোধী ইসরাইল।
দখলদার ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ ও গণহত্যা এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, এখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে নরম সুরে হলেও কথা বলতে শুরু করেছে।
জাতিসংঘ বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলেও এই সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মাঝে মধ্যেই ইসরাইলি আগ্রাসনের সমালোচনা করেন। এ কারণে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে দখলদার ইসরাইল। সম্প্রতি তারা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ইসরায়েলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গুতেরেসকে ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে তিনি যে কূটনৈতিক সুবিধা পান, সেটা দেবে না ইসরাইল। দখলদার সরকার বলেছে, জাতিসংঘের ইতিহাসে ‘একটি কলঙ্ক’ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আন্তোনিও গুতেরেস।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটৎস। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ইসরাইলে পারসনা নন গ্রাটা ঘোষণা করছি এবং তার ইসরাইলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করলাম।
এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১০৫ টি দেশ এক চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিরুদ্ধে ইসরাইলি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং মহাসচিবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিরুদ্ধে ইসরাইলি পদক্ষেপ গ্রহণ করার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘ সনদের ৯৯ ধারা জারি করার আহ্বান জানিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের চরম ক্রোধের শিকার হন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এর মাধ্যমে গুতেরেসের ‘চরম নৈতিক অবক্ষয়’ ঘটেছে বলে মন্তব্য করে তেল আবিব। জাতিসংঘ মহাসচিবের পদ থেকে গুতেরেসকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানায় ইহুদিবাদী সরকার।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর অব্যাহত ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। এসব দেশের মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনটি ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন এক যৌথ বিবৃতিতে দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের ইচ্ছাকৃত হামলাকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছে এবং অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়া ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দেশটি ইসরাইলকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘গণহত্যাকারী’ উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বর্বরোচিত হামলা অব্যাহত রাখার কারণে তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে।
গতকাল (শুক্রবার) নিকারাগুয়ার পার্লামেন্ট গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশটির সরকারকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে একটি বিল পাস করে। এরপর একই দিন নিকারাগুয়া সরকার তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করল।
ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি বলেছে, ইসরাইল শুধু ফিলিস্তিনেই বর্বরতা চালায়নি সেইসঙ্গে তাদের হামলা লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরানের নিরাপত্তাকেও হুমকিগ্রস্ত করে তুলেছে।
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সরকার হিসেবে পরিচিত। দেশটির সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে এর আগে ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া ও কলম্বিয়া তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এছাড়া, ল্যাটিন আমেরিকার আরো কিছু দেশ গাজায় ইসরাইলি পাশবিকতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
পার্সটুডে