এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
১.৫ মিলিয়ন ইউয়ান (২১০,০০০ মার্কিন ডলার ) এরও বেশি প্রতারণা করার পর নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে প্লাস্টিক সার্জারি করান একজন চীনা নারী। অপরাধ ঢাকতে পালিয়ে যান থাইল্যান্ডে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ওই নারী ধরা পড়েছেন থাই পুলিশের হাতে। থাই ইমিগ্রেশন পুলিশ একটি গোপন তথ্য পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে ৩০ বছর বয়সী ওই নারী যিনি সাই পরিচিত, ব্যাংককের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন এবং প্রায়শই মুখ ঢাকা দিয়ে রাস্তায় বেরোতেন। কখনো কখনো তাকে মাস্ক পরেও বাইরে বেরোতে দেখা যেত।
এরপরেই স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা ভেবেছিলেন সে একজন অবৈধ অভিবাসী হতে পারে। ইমিগ্রেশন অফিসাররা খবর পাবার পর তার ফ্ল্যাট পরিদর্শন করতে আসেন এবং তার পাসপোর্ট চেক করার অনুরোধ জানিয়ে তাকে ফ্ল্যাটের নিচে আসতে বলেন। এরপরই সামনে আসে আসল তথ্য। ইমিগ্রেশন অফিসাররা জানতে পারেন যে সাই ২০২২ সালের শেষের দিকে ভিসা-অন-অ্যারাইভালের মাধ্যমে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছিলেন। তাকে পর্যটনের জন্য ১৫ দিনের থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তার ভিসা ৬৫০ দিনেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে। ফলে গত ৭ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে কর্তৃপক্ষ।
তদন্তের সময় সাই একটি সুপরিচিত এয়ারলাইনের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন পুলিশের কাছে। থাই পুলিশ পরে আবিষ্কার করে যে সাই ইন্টারপোলের ব্লু নোটিশের অধীনে ছিলেন। ২০১৬ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে তিনি এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট- এর চাকরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছয় জনের কাছ থেকে ১.৫২ মিলিয়ন ইউয়ান হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার আগে মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করানোর জন্য সেই অর্থের একটি অংশ ব্যবহার করেছিলেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সাই-এর জালিয়াতি নিয়ে সন্দেহ দানা বাধে তার চাচাতো ভাই উ-এর মনে। সে রেড স্টার নিউজকে জানিয়েছে যে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসাবে অনলাইনে দাবি করেছিলেন সাই।
প্রায়শই বিভিন্ন বিদেশি গন্তব্য থেকে ছবি শেয়ার করতেন। ২০১৮ সালে, উ-এর থেকে ৫২,০০০ ইউয়ান ধার নিয়ে সাই দাবি করেন জাপানে একটি ঘড়ি কেনার জন্য কাউকে সহায়তা করতে তার তহবিলের প্রয়োজন। চুক্তিস্বরূপ তিনি উকে ৫০০০ ইউয়ান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উ ১৭,০০০ ইউয়ান পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন, তবে অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও, সাই ধার নেয়া টাকার অবশিষ্টাংশ ফেরত দেননি। অনলাইনে নজরদারি চালিয়ে, উ আবিষ্কার করেন যে সাই দীর্ঘদিন ধরে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং এর পরিবর্তে তিনি প্রতারণামূলক কার্যকলাপ বেছে নেন।
থাই ইমিগ্রেশন ব্যুরো ডিভিশন বলেছে যে, সাইকে তার ভিসা পেরিয়ে যাবার পরেও দেশের মাটিতে বেশিদিন থাকার জন্য থাই আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে তাকে চীনে ফেরত পাঠানো হবে। তার কেসটি চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে তার প্লাস্টিক সার্জারির আগে এবং পরে ছবিগুলি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, যতই ছদ্মবেশ থাক না কেন, আপনি আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না! পুলিশকে ধন্যবাদ!
চীনের আরেকটি মামলায় লাও রংঝি নামে এক নারী একাধিক খুনের জন্য দায়ে অভিযুক্ত হয়েও প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে ২০ বছর ধরে গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০১৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং গত বছরের ডিসেম্বরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।