এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:১২ পিএম
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, জনপ্রশাসনকে সংস্কার করতে হলে জনগণের মতামত নিতে হবে। তা না হলে সেটি শুধুমাত্র একাডেমিক হবে, কিন্তু বাস্তবসম্মত হবে না।
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, একইদিনে জাতীয় ও ইউপি নির্বাচন হলে আর কেউ বুথ দখল করতে পারবে না। এছাড়া ইউপি নির্বাচনের পদ্ধতি বদলে মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যানদের নির্বাচিত করা যায় কিনা সেটিও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে গণহারে নিয়োগ না দিয়ে জনগণের জানমাল রক্ষায় জনবান্ধব পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আগের স্বৈরাচার সরকারের ইচ্ছা ছিল গোপালগঞ্জকে বিভাগ করার, তাই অতি প্রাচীন ফরিদপুর বিভাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
সমগ্র দেশকে ৪টি প্রদেশে ভাগ করে শক্ত কাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘কিছু জিনিস আমরা দেব যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে ফরম্যাটের জন্য দরকার। কীভাবে হতে পারে সরকার। যেমন আমাদের একটি চিন্তায় আছে, যে ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদে এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তাতে পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্সটাই বেশি থাকে। আর এটিকে যদি আমরা মাল্টিপল ওয়ার্ডে করে দিই, মেম্বাররা চেয়ারম্যানদের নির্বাচিত করবে। এটি আমার ব্যক্তিগত চিন্তা। এছাড়া আমার সহকর্মীদের সাথেও কথা বলেছি, তারাও এটিই করেছে। এটি যদি করে দিই তাহলে ওখান থেকেই গণতন্ত্রটা শুরু হবে। তাহলে কেউ পুরো জিনিসিটা দখল করে বসে থাকবে না। তখন ওই মেম্বার যারা হবে, তারা ভোট করে আরেকজনকে চেয়ারম্যান বানাতে পারবে। এতে একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদিও নির্বাচনের জন্য একটা আলাদা কমিশন আছে, তবু আমাদের চিন্তাটা হলো- একইদিনে ইউনিয়ন পরিষদ আর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে বুথ দখল আর সহজ হবে না। কারণ ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার যদি ওয়ার্ডভিত্তিতে হয় তারা পাহারা দেবে। তাহলে আর কেউ বুথ দখল করতে পারবে না। একইদিনে যদি নির্বাচন হয়। এটি আমরা সুপারিশ করবো বলে চিন্তা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক জায়গায় ওইভাবে জবাবদিহিতা আনা একটি কঠিন ব্যাপার। যদি লোকাল গভর্মেন্ট ইলেক্টেড রেস্টেক্টেড গভর্মেন্ট হয় যদি তাহলে হয়তো জবাবদিহিতা আসতে পারে। যদি আমরা ইউনিয়ন পরিষদে আনতে পারি, উপজেলায় আনতে পারি তাহলে কিছুটা জবাবদিহিতা আসবে। আল্টিমেটলি আমাদের একটা ইউনিটির এস্টেট। আমার বলবো এটাকে চারটা প্রভিন্সে করার জন্য। যদিও এটা এখনও আমরা চূড়ান্ত করিনি। আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে। পরবর্তী কয়েকদিনে এটি আরও ভেবেচিন্তে আমরা সুপারিশ করব।’
এসময় তিনি সরকারি অফিস আদালতে এত জনবল প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন যেভাবে অনেক লোক নিয়োগ করা হয়, এত লোক দরকার নাই। আরও কম লোকে সরকার চলতে পারে। পুলিশের সংখ্যা আরও দরকার। কারণ আজকে জটিলতার কারণে আইনশৃঙ্খলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে গত সরকার যেভাবে করেছিল সেভাবে না। জেনুইন অব পিপল অরিয়েন্টেটড যাতে তৈরি করা যায় সেজন্য আমাদের সুপারিশ থাকবে। ডিসি সাহেবের সাথে সাধারণ মানুষ দেখা করতে পারে না। এজন্য ভাবছি, সপ্তাহে একদিন ডিসি অন্য কোনো কাজ করবেন না, পাবলিক প্লেসে এভেইলেভেল থাকবেন। যেকোন মানুষ এসে খোলামেলাভাবে তার সাথে দেখা করতে পারবেন। ‘ডিসি সাহেব যদি কনফারেন্স রুমে থাকেন ওইদিন, অন্য ডিপার্টমেন্টের অফিসাররাও থাকবেন, এসপি সাহেব থাকবেন, তাহলে মানুষ এসে যেকোন বিষয় সরাসরি ফয়সালা করতে পারবে।’ এটি একটি ভালো কাজ হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কারের বিষয়টি অনেক কঠিন ও ব্যাপক বিষয়। আমরা এখনও চিন্তা করছি কীভাবে এটি করব। সরকার এটি করার জন্য তিনমাস সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদিও তিনমাসের মধ্যে এটি করাটাও একটা কঠিন। তা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করছি। বসে বসে হয়তো একাডেমিক কিছু করে দেয়া যাবে, তবে তা বাস্তবসম্মত হবে না। এজন্য আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এ ব্যাপারে জনগণের মতামত নিচ্ছি।’
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘বিগত আমলে নানাভাবে প্রশাসনকে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা এই প্রশাসন শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলা যায় কিনা সেটিও চিন্তা করছি। আমার এরইমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন কিন্তু অফিসে আর লাল ফিতা নাই। বাস্তবে এসবই ওয়েবসাইটে প্রবেশ গেলেই পাবেন। তারমধ্যে একটি সার্ভিস সেবাদান। পেনশন ফাইল, ডেভেলপমেন্ট ফাইল। আমাদের এই নতুন প্রজন্ম যারা রক্তের বিনিময়ে আমাদের এ পরিবর্তন এনে দিলো তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটা দিতে হবে। চাকরি আর চাকরির মতো থাকবে না। আমরা চাকর জনগণের। জনগণ আমাদের বেতন দেয়। আমাদের নতুন করে সকলকে এটি ভাবতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, সদস্য ডা. সৈয়দা শাহীনা সোবহান ও ফিরোজ আহমেদ। মতবিনিময় সভায় জেলার সামাজিক, সাস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।