হিলি সংবাদদাতা প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি অঞ্চলে সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা। সরিষার সোনালি ফুলে ভরা মাঠের পাশে খোলা জায়গায় মৌমাছির বাক্স রেখে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণে মৌয়ালরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এই কার্যক্রম সরিষার ফলন বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
মৌয়ালরা জানান, সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কাঠ ও স্টিলের বাক্স ব্যবহার করা হয়। বাক্সের ভেতরে রানি মৌমাছি রাখা হয়। রানি মৌমাছির আকর্ষণে পুরুষ মৌমাছিরা সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ওই বাক্সে জমা করে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে মধুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌয়াল মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের সময়। সরিষার ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহের জন্য যে বাক্স বসানো হয়, তাতে মোম দিয়ে তৈরি ফ্রেম রাখা থাকে। কয়েকদিন পর মধু ভর্তি ফ্রেমগুলো সংগ্রহ করে মেশিনের মাধ্যমে মধু বোতলজাত করা হয়। এ মধুর স্বাদ ও মান অনন্য।”
অপর মৌয়াল সোহাগ সরকার বলেন, “মৌমাছি চাষ একটি লাভজনক পেশা। সরিষা ক্ষেত থেকে চার মাস মধু সংগ্রহ করে বাকি আট মাস চিনি খাইয়ে মৌমাছি পোষাতে হয়। প্রতি মৌসুমে প্রতিটি বাক্স থেকে ভালো মানের মধু সংগ্রহ সম্ভব হয়। এই মধু স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।”
সরিষা ক্ষেত থেকে সরাসরি মধু কিনতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল উড়াও বলেন, “মৌয়ালদের সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের পদ্ধতিটি খুবই আকর্ষণীয়। এখান থেকে দেড় কেজি মধু ৬০০ টাকায় কিনেছি। এর স্বাদ খাঁটি মধুর মতোই। সরিষার ফুল থেকে পাওয়া এই মধুর স্বাদ ও গুণমান সত্যিই ব্যতিক্রম।”
ঘোড়াঘাটের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, “রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌয়ালদের মধু সংগ্রহের দৃশ্য দেখতে পাই। তাদের মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া দেখে মুগ্ধ হয়ে এক কেজি মধু কিনে নিয়েছি। এ মধুর স্বাদ খাঁটি ও প্রাকৃতিক।”
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ আরজেনা বেগম বলেন, “চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় ২৬৪২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা চাষের সঙ্গে মৌমাছি চাষ হলে ফলন ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। এ মধু সংগ্রহ প্রকল্পটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। এটি মৌয়ালদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করছে এবং সরিষার ফলন বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।”
সরিষা চাষের পাশাপাশি মধু সংগ্রহ একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই কার্যক্রম শুধু মৌয়ালদের জন্য নয়, কৃষকদের জন্যও একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এটি একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।