হিলি সংবাদদাতা প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে প্রথমবারের মতো পতিত জমিতে কমলা চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন বদরুল আলম (বুলু)। তার কমলা বাগান এখন এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনার প্রধান বিষয়। পাহাড়ি অঞ্চলে নয়, বরং সমতল ভূমির পতিত জমিতে কমলার চাষ সত্যিই অভাবনীয়। ঘন সবুজ পাতা আর থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা পাকা কমলা বাগানের পরিবেশকে এক স্বপ্নময় রূপ দিয়েছে।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার বাগানে আসছেন। কেউ কমলা নেড়েচেড়ে দেখছেন, আবার কেউ মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন। বদরুল আলমের কমলা চাষ স্থানীয়ভাবে কমলার উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভূমিকা রাখছে। ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি বিভাগ তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
খাদ্য শস্য উৎপাদনে প্রসিদ্ধ উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের এই ঘোড়াঘাট উপজেলার নিতাইশাহ এলাকায় বদরুল আলম তার চার বিঘা পতিত জমিতে কমলার বাগান শুরু করেন। কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করার পর চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে তিনি এই উদ্যোগ নেন। তার বাগানে চাষ হচ্ছে দার্জিলিং, চায়না, এবং ভুটানসহ কয়েক প্রজাতির কমলা। বাগানের প্রতিটি গাছই এখন ফলনশীল, আর ফলের গুণগত মান অসাধারণ।
বদরুল আলম জানান, "প্রথমে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কৃষিকে জীবিকার পথ হিসেবে বেছে নিয়ে এখন আমি সফল। ৪০০টি কমলা গাছে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা করে। বর্তমানে প্রতিটি গাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার কমলা বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি মৌসুম শেষে প্রায় ৭ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবো।"
বাগানে আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই কমলার গুণগত মান দেখে মুগ্ধ। একজন দর্শনার্থী বলেন, "ঘোড়াঘাটে এমন সুন্দর কমলার বাগান দেখব, তা ভাবিনি। এর আগে ভারত থেকে আমদানি করা কমলা খেয়েছি। এখন আমাদের নিজের মাটিতে উৎপাদিত কমলা খেলাম, যা মিষ্টি এবং সুস্বাদু।"
বাগানের শ্রমিক আতাউর রহমান বলেন, "আমি শুরু থেকেই এই বাগানে কাজ করছি। প্রতিটি গাছে প্রচুর কমলা ধরেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসছেন কমলা দেখতে এবং কিনতে। আমরা টাটকা কমলা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।"
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন, "এই প্রথম উপজেলায় কমলার বাণিজ্যিক চাষ হয়েছে। কমলার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা মেটাতে আমরা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি।"
বর্তমানে ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হচ্ছে। এতে বেকার যুবকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
পতিত জমিকে কৃষির আওতায় এনে বদরুল আলম এক নজির স্থাপন করেছেন। তার উদ্ভাবনী উদ্যোগ শুধু তার নিজের আর্থিক অবস্থাই পরিবর্তন করেনি, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। ঘোড়াঘাটের মাটির গুণগত মান এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কমলা চাষ ভবিষ্যতে আরও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি করবে।
বদরুল আলমের সফলতা অন্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করা সম্ভব।