এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০৪ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে তীব্র কমতির পর এখন মার্কিন শেয়ারবাজারও খুলেছে ধসে। ট্রাম্প চীনের উপর বাড়তি ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, পাশাপাশি বেইজিং যদি তাদের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার না করে তবে আলোচনা বন্ধেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
একটি বিমান সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, "অনেক নেতাই এখন চুক্তি করতে আগ্রহী।" তবে তার এই বক্তব্য বিশ্ববাজারে আরও বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। হংকং শেয়ারবাজার গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় একদিনের পতন দেখেছে, যেখানে প্যানিক সেলিংয়ের কারণে হ্যাং সেং ইনডেক্স ৫.৫% নিচে নেমে এসেছে।
ইউরোপের জোরালো প্রতিবাদ
লাক্সেমবার্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন ইউরোপীয় বাণিজ্য কর্মকর্তারা। জার্মানির অর্থমন্ত্রী ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে "অর্থহীন" আখ্যা দিয়েছেন। ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, "এটি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে বলেছে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.৫% কমিয়ে দিতে পারে।
গ্রিনল্যান্ডের নতুন সংসদ ও ট্রাম্পের আগ্রহ
এদিকে, মার্চে নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেছে গ্রিনল্যান্ডের নতুন সংসদ। ৩৩ বছর বয়সী জেনস-ফ্রেডেরিক নিলসেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তার দল ডেমোক্রাটিট নির্বাচনে ৩১টি আসনের মধ্যে ১০টি পেয়েছে।
নিলসেন বলেছেন, "বহিঃশক্তির চাপের মুখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।" তিনি ডেনমার্কের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ওপর জোর দিয়েছেন, যাকে তিনি "গ্রিনল্যান্ডের নিকটতম অংশীদার" বলে অভিহিত করেছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করায় গত বছর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই দ্বীপটি ডেনমার্কের অধীন হলেও স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। নতুন সরকার গঠন করতে ডেমোক্রাটিট দল তিনটি অন্যান্য দলের সাথে জোট বেঁধেছে, যারা মোট ২৩টি আসন নিয়ন্ত্রণ করে।
বিশ্লেষকদের মতামত
অর্থনীতিবিদ ড. সাইমন জনসন বলেছেন, "ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। ভোক্তাদের বেশি দাম দিতে হবে, রপ্তানি কমবে এবং চাকরির সুযোগ হ্রাস পাবে।"
অন্যদিকে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা মার্কিন পণ্যে ২৫% থেকে ৫০% শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
বাজারের অবস্থা
• ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৫০০ পয়েন্ট নিচে
• ন্যাসড্যাক কম্পোজিট ৩% নিচে
• জাপানের নিক্কেই ৪.২% ক্ষতিগ্রস্ত
• জার্মানির ড্যাক্স ৩.৮% কম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে জি২০ অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যেখানে এই ইস্যুটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রিনল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী নিলসেনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের আগ্রাসী নীতির মোকাবেলা করা। তিনি বলেছেন, "আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সচেষ্ট থাকব।"
বাণিজ্য যুদ্ধের এই নতুন অধ্যায় কতদূর যাবে, তা এখন সবারই চোখ রাখার বিষয়। ট্রাম্পের অনড় অবস্থান এবং চীনের সম্ভাব্য পাল্টা ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। খবর আলজাজিরার