ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৫ | ৩ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

ইইউর জবাবি শুল্ক অনুমোদনের পথে, মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন মাত্রা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক     প্রকাশিত:  ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০৪ পিএম

ইইউর জবাবি শুল্ক অনুমোদনের পথে, মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন মাত্রা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নীতির জবাবে পাল্টা শুল্ক আরোপের পথে এগোচ্ছে। লাক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত ইইউ বাণিজ্য মন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকে ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এই তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ ভোটাভুটি হবে এবং ১৫ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক আদায় শুরু হতে পারে।

ইইউ এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে "জিরো-ফর-জিরো" ট্যারিফ চুক্তির প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ শিল্পপণ্যে শুল্ক শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব ছিল এটি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে ইইউ এখন পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে।

কোন পণ্যগুলোতে শুল্ক আসছে?
ইইউর প্রস্তাবিত তালিকায় রয়েছে:

  • হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেল

  • বোরবন হুইস্কি

  • লেভিস জিন্স

  • অরেঞ্জ জুস

  • বিভিন্ন ধরনের স্টিল পণ্য

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইইউ আনুষ্ঠানিকভাবে চীন ও কানাডার সাথে যোগ দিচ্ছে যারা ইতিমধ্যেই মার্কিন পণ্যে জবাবি শুল্ক আরোপ করেছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও গভীর মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

বাজারের অবস্থা ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন শেয়ারবাজার গত সপ্তাহে ব্যাপক ধসের শিকার হয়েছে। ডাও জোন্স ৮০০ পয়েন্টের বেশি হারিয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এই ক্ষতিকে তুচ্ছ করে বলছেন এটি সাধারণ আমেরিকানদের তেমন প্রভাবিত করবে না।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো স্ট্যান ভিউগার এই বক্তব্যকে "অদ্ভুত" আখ্যা দিয়েছেন। আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "অনেক আমেরিকান তাদের অবসর তহবিল ও সন্তানের কলেজ ফান্ডের জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। এই ধস সবার জীবনেই প্রভাব ফেলবে।"

কী হতে যাচ্ছে সামনে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে:

  • ইইউর শুল্ক কার্যকর হলে মার্কিন রপ্তানি ২০% কমতে পারে

  • ইউরোপে আমেরিকান পণ্যের দাম ১৫-২৫% বেড়ে যাবে

  • গাড়ি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

  • বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়বে

ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করে জার্মান অর্থমন্ত্রী বলেছেন, "এটি একটি ধ্বংসাত্মক নীতি যা কেউই জিতবে না।" ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী এটিকে "অর্থনৈতিক আত্মঘাতি" বলে বর্ণনা করেছেন।

সাধারণ মানুষের কী হবে?
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব সরাসরি পড়বে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর:

  • ইউরোপে আমেরিকান পণ্যের দাম বাড়বে

  • মার্কিন কৃষকদের রপ্তানি আয় কমবে

  • বহু ছোট ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে

  • নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি ব্যাহত হবে

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল আলোচনার মাধ্যমে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অনমনীয় অবস্থান এবং ইইউর জবাবি পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।

আগামী কয়েক সপ্তাহেই বোঝা যাবে এই বাণিজ্য যুদ্ধ কি সমঝোতায় পৌঁছায় নাকি বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। এক thing is certain - সাধারণ মানুষই এই লড়াইয়ের মূল ভুক্তভোগী হবে।