এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম
মালি থেকে আসা নথিহীন নির্মাণ শ্রমিক মুসা* ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে প্যারিসের অ্যাডিডাস অ্যারেনার নির্মাণস্থলে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন একটাই আশায়—তাঁর হাতে কাঙ্ক্ষিত কাগজপত্র আসবে, যাতে তিনি বাড়ি ফিরে পরিবারের সাথে দেখা করতে পারেন। ২০১৯ সালে আলজেরিয়া থেকে স্পেন হয়ে ফ্রান্সে আসা এই ২৫ বছর বয়সী যুবক এর মধ্যে একদিনের জন্যও ছুটি নেননি। দাদা-দাদির মৃত্যুর পর থেকে তাঁর মন কাঁদে বাড়ি ফিরে কাছের মানুষদের সাথে শোক ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
৮ মাস ধরে ৮,০০০ আসনের এই স্টেডিয়াম তৈরিতে কাজ করেছেন মুসা, যেখানে ২০২৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন হবে। ৪০০’র বেশি শ্রমিক এই সাইটে কাজ করছিলেন। অন্যের কাগজপত্র ব্যবহার করে তিনি নিয়মিত বেতন পেতেন—নথিহীন কর্মীদের মধ্যে যা একটি সাধারণ কৌশল। দিনে ১০ ঘণ্টার কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে পেতেন ৭৫ ইউরো (৮৫ ডলার), যা থেকে পরিবহন খরচ, মাস্ক বা সুরক্ষা সামগ্রী বাদ দিতে হতো।
মুসাদের আন্দোলন সফল হয়েছিল মনে হচ্ছিল। ভোরবেলা সাইট দখল, অবরোধ ও দীর্ঘ আলোচনার পর সন্ধ্যায় একটি চুক্তি হয়। নথিহীন ১৪ শ্রমিকের তালিকা ফরাসি পুলিশ প্রিফেকচারে জমা দেওয়া হয়, যাতে তাদের কাগজপত্র প্রক্রিয়া করা যায়। প্যারিস সিটি, নির্মাণ কোম্পানি বাউইগস ও সাবকন্ট্রাক্টরদের সাথে স্বাক্ষরিত হয় একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি—যার মাধ্যমে থাকার অনুমতি ও স্বাস্থ্য বীমা পাওয়ার কথা ছিল তাদের।
কিন্তু ১৮ মাস পরও সেই ফাইলগুলো অনুমোদিত হয়নি। ১৪ জনের মধ্যে মাত্র একজনকে প্রিফেকচারে ডাকা হয়েছে। অনেকেরই ধারণা, এই বিলম্ব ইচ্ছাকৃত। "আমরা বেশি কিছু চাইনি, শুধু থাকার অনুমতি ও স্বাস্থ্য বীমা কার্ড। এটা আমাদের অধিকার। আজও এই দেশে কাজ করার অধিকার আমাদের নেই," বলছেন মুসা।
১৪ শ্রমিকের মধ্যে তিনজন ও সিএনটি-এসও ইউনিয়নের আইনজীবী রাফিকা রাহমানি আল জাজিরাকে জানান, তারা এক বছর আগেই সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। "আমাদের পেমেন্ট স্লিপসহ সবকিছু আছে। আমরা নিয়ম মেনেই চলছি। কিন্তু এখনও একটি সমন পর্যন্ত পাইনি," বলছিলেন অন্যতম শ্রমিক আদমা*। ফাইল দু’বার জমা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো অগ্রগতি নেই।
মন্ট্রেইলের পূর্বাঞ্চলে ১১ জনের সাথে একটি ঘরে থাকা আদমা বলেন, "ফ্রান্সে নথি না থাকাটা জেলখানায় থাকার মতো। এখানে কাগজপত্র না থাকলে আপনার কোনো মূল্য নেই।" নির্মাণ কাজের ক্লান্তিকর শিফটের পরও তিনি ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখার রাতের ক্লাসে যোগ দেন।
প্যারিস অলিম্পিকের মতো বড় আয়োজনের পেছনে হাজারো নথিহীন শ্রমিকের পরিশ্রম লুকিয়ে আছে। তাদের অধিকার আদায়ের এই সংগ্রাম শুধু ফ্রান্সেই নয়, সারা বিশ্বের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে। খবর আলজাজিরার
#অভিবাসী_শ্রমিক #প্যারিস_অলিম্পিক #শ্রমিক_অধিকার #নথিহীন_শ্রমিক #ফ্রান্স