এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০৪ পিএম
সুন্দরবনের মায়াবী হরিণগুলো আজ মৃত্যুভয়ে তটস্থ। বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে গত এক মাসে কোস্টগার্ডের অভিযানে ১২ মণ হরিণের মাংসসহ ৯ শিকারি আটক হলেও মূল হোতারাদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বনজীবী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি সুসংগঠিত চক্র সুন্দরবন সংলগ্ন দরিদ্র জেলেদের টাকার লোভ দেখিয়ে হরিণ শিকার করাচ্ছে।
শিকারিরা প্রধানত শীত মৌসুমে সুযোগ নেয়, যখন খালের পানি শুকিয়ে হরিণগুলো লোকালয়ে চলে আসে। গরু-খাসির মাংসের চেয়ে সস্তা হরিণের মাংসের চাহিদা পূরণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, "গত মাসে আমরা মোংলা ও শ্যামনগর এলাকা থেকে ৪২৩ কেজি হরিণের মাংস ও ৮০টি ফাঁদ জব্দ করেছি। কিন্তু মূল চক্রনেতারা এখনও ফাঁসের বাইরে।"
এক আটক শিকারি রেজাউল ইসলামের স্বীকারোক্তি মতে, "আমরা শুধু মাংস বহন করতাম, প্রতি কেজির বিনিময়ে ২০০ টাকা পেতাম। আসল দোষীরা তো বড়লোক, তাদের কেউ ধরছে না।"
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের মতে, "বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ ছাড়া এত বড় আকারে শিকার সম্ভব নয়। আমরা কাঁটাতারের বেড়া ও টহল বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।"
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, হরিণ কমে গেলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারও খাদ্য সংকটে পড়বে। বর্তমান আইনে হরিণ শিকারের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা, যা অপরাধীদের নিরুত্সাহিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদিক মোহসিন উল হাকিমের পরামর্শ, "শিকারিদের তালিকা করে তাদের বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রভাবশালী চক্রনেতাদের খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে।"
বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে লোকবল সংকট সত্ত্বেও তারা নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু ছোট শিকারিদের ধরলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না, বরং অপরাধের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
#সুন্দরবন #হরিণ_শিকার #বন্যপ্রাণী_সংরক্ষণ #কস্টগার্ড #পরিবেশ_সুরক্ষা