ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৫ | ৯ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের ১০০ দিন: মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার উপর হামলা, কনজারভেটিভ পডকাস্টারদের উত্থান


এনবিএস ওয়েবডেস্ক     প্রকাশিত:  ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম

ট্রাম্পের ১০০ দিন: মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার উপর হামলা, কনজারভেটিভ পডকাস্টারদের উত্থান

নিউ ইয়র্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য মিডিয়া শুধু একটি সংবাদ মাধ্যম নয়, এটি একটি "জনশত্রু"। গত ১০০ দিনে তিনি মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার উপর একের পর এক হামলা চালিয়েছেন, অন্যদিকে রক্ষণশীল ব্লগার ও পডকাস্টারদের হাতে তুলে দিয়েছেন তার র্যাডিক্যাল এজেন্ডা প্রচারের দায়িত্ব। সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমগুলো তার রোষানলে থাকলেও এবার সম্মানিত অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)ও তার টার্গেটে। কারণ? এপি "মেক্সিকো উপসাগর" বলেছে, ট্রাম্পের নির্দেশিত "আমেরিকা উপসাগর" নয়! এর জেরে এপিকে ওভাল অফিস ও এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প শুধু কথায় ক্ষান্ত হননি, তিনি আইনগত হুমকিও দিচ্ছেন। সিবিএস, ডেস মোইনস রেজিস্টারের মতো মিডিয়া হাউজগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, এবিসিকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেছেন। "সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার এই চেষ্টা আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য হুমকি," বলেছেন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের ক্যাথেরিন জ্যাকবসেন।

মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের এই অভিযানে ট্রাম্পের প্রধান সহযোগী এলন মাস্ক। তিনি দাবি করেছেন, সিবিএসের '৬০ মিনিটস' টিমকে জেলে পাঠানো উচিত! এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ভয়েস অফ আমেরিকা, রেডিও ফ্রি এশিয়ার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছে, এনপিআর ও পিবিএসের ফেডারেল ফান্ড কাটছাঁটের হুমকি দিচ্ছে। ফলাফল? রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে আমেরিকার অবস্থান ৪৫ থেকে নেমে ৫৫-এ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকায় ট্রাম্প কতদূর যেতে পারবেন? নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যান কেনেডি বলছেন, "তার ক্ষমতা সীমিত। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বন্ধ করতে পারবেন না, কিন্তু চেষ্টা করছেন তাদেরকে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে।"

ট্রাম্পের এই মিডিয়া কৌশলের পেছনে কাজ করছে আমেরিকানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস। গ্যালাপের জরিপে দেখা গেছে, ২০০০-এর দশকে ৫০% এর বেশি মানুষ মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে বিশ্বাস করলেও ২০২৪ সালে এই সংখ্যা নেমে ৩১%-এ দাঁড়িয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প ইনফ্লুয়েন্সার, পডকাস্টারদের হাতে ক্ষমতা দিচ্ছেন। রিয়েল আমেরিকা ভয়েসের ব্রায়ান গ্লেনের মতো ব্যক্তিত্বরা এখন হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল প্রচারণায় সামিল হচ্ছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্যুট না পরার জন্য পাবলিকলি হেনস্থা করা থেকে শুরু করে ট্রাম্পের পলিসিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করাই এখন তাদের কাজ।

এই কৌশল নতুন নয়। ২০১৫-১৬ সাল থেকেই ট্রাম্প ফক্স নিউজের বিকল্প হিসেবে রক্ষণশীল মিডিয়াকে গড়ে তুলেছেন। তার সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের "ফ্লাড দ্য জোন" কৌশল এখনও কাজ করছে—এত বেশি সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া যে সত্য মিথ্যা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অধ্যাপক পেক বলছেন, "এখন প্রশ্ন হলো, কোন মিডিয়া হাউসের এত ক্ষমতা আছে যে এই সুনামির মুখে সত্যকে টিকিয়ে রাখতে পারবে?"

একদিকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার উপর হামলা, অন্যদিকে বিকল্প মাধ্যমের উত্থান—এই দ্বন্দ্ব শুধু মিডিয়ার জন্য নয়, আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্পের এই ১০০ দিন দেখিয়ে দিয়েছে, তিনি শুধু রাজনীতিবিদ নন, একজন মাস্টার ন্যারেটিভ কন্ট্রোলারও বটে।

#ট্রাম্প_মিডিয়া_যুদ্ধ #মেইনস্ট্রিম_বনাম_পডকাস্ট #গণতন্ত্র_বনাম_প্রোপাগান্ডা #প্রেস_ফ্রিডম #আমেরিকান_রাজনীতি