এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

ইরান এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি। রাজধানী তেহরানের পানির উৎস মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শহরটির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই সংকট ইরানের স্থিতিশীলতা ও পারমাণবিক লক্ষ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, এবং বিশ্ব রাজনীতিতে দেশটিকে দুর্বল করে দেবে। জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথের পরিচালক কাভে মাদানি এই মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেছেন, খরার পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে দেশটি 'পানি দেউলিয়া' হয়ে যেতে পারে। যা ইরানের সামগ্রিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের অবস্থান দুর্বল করবে।
মাদানি আরও যোগ করেন, ইরান যদি তাদের নিজস্ব নীতি অনুসরণ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করতে হবে। পানি না থাকলে দেশটির স্থিতিশীলতা কমে যাবে এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়বে।
কাভে মাদানি এর আগেও ইরানের পরিবেশগত অব্যবস্থাপনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাঁর মতে, ইরানের এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বহু বছর আগে থেকেই সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছিল।
তেহরান খালি করার শঙ্কা
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন যে, শীতের আগে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে তেহরানকে আংশিকভাবে খালি করতে হতে পারে। তিনি বাসিন্দাদের পানির ব্যবহার কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমানোরও আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানী তেহরানে পানি সরবরাহকারী পাঁচটি প্রধান বাঁধের মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। প্রধান জলাধার লাতিয়ান বাঁধে এখন ধারণক্ষমতার ১০ শতাংশেরও কম পানি রয়েছে। কারাজ বাঁধের অবস্থাও একই রকম শোচনীয়।
বাঁধটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ-আলি মোয়াল্লেম জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত ৯২ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে রিজার্ভারে মাত্র ৮ শতাংশ পানি রয়েছে, যা ব্যবহারের অযোগ্য।
ইরানজুড়ে এই পানিসংকট এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনগণের মনে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। রাজধানী তেহরান থেকে শুরু করে খুজেস্তান ও সিস্তান-বালুচিস্তানের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন ক্রমশই অসহনীয় হয়ে উঠছে।