এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১২ পিএম

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে শুরু হয়েছে নতুন উত্তেজনা। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ “সাংস্কৃতিকভাবে সবসময়ই ভারতের অংশ”—আর এই মন্তব্যকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আখ্যা দিয়েছে “অবাস্তব, উসকানিমূলক ও ইতিহাস বিকৃতির বিপজ্জনক চেষ্টা”।
রাজনাথ সিং প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানির বইয়ের উল্লেখ করে বলেন, সিন্ধি হিন্দুরা আজও মানতে পারেন না যে সিন্ধ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে সীমান্ত পরিবর্তন হলে “সিন্ধ আবারও ভারতে ফিরে আসতে পারে”।
এই মন্তব্য ঘিরে দু’দেশের সম্পর্ক আবারও তেতে উঠেছে। এ ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা ইতিহাস ঘেঁটে ব্যাখ্যা দিয়েছেন—সিন্ধ কেন পাকিস্তানের অংশ হলো, আর এর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পটভূমি কী।
সিন্ধের প্রাচীন পরিচয়: কোথা থেকে শুরু?
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানায়—সিন্ধু নদীর ব-দ্বীপ এলাকা ছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্র, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল মহেঞ্জোদারো ও কোট ডিজি। ২৩শ থেকে ১৭শ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতা।
সিন্ধ কেন পাকিস্তানের অংশ হলো?
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ তার ১৪ দফায় সিন্ধকে বোম্বে থেকে আলাদা করার দাবি জানান।
ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৬ সালে সিন্ধকে আলাদা প্রদেশ ঘোষণা করে।
মুসলমান প্রধান প্রদেশ হওয়ায় ১৯৪৭ সালেই সিন্ধ পাকিস্তানের অংশ হয়।
গবেষক ড. মোহাম্মদ আলি শেখ লিখেছেন—৭ম শতাব্দীতেই সিন্ধ ছিল বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। পর্যটক হিউয়েন সাং উল্লেখ করেছিলেন, সেখানে অগণিত স্তূপ ও শত শত বিহার, যেখানে ১০ হাজার ভিক্ষু থাকতেন।
ইতিহাসবিদ জন কেয়ে বলেন—বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী, তবে হিন্দুধর্মও উপস্থিত ছিল; প্রায় ৩০টি মন্দির ছিল সেখানে।
সিন্ধের রাজনৈতিক ইতিহাস: প্রতিরোধ ও বিক্ষোভের দীর্ঘ পথ
ঐতিহাসিক তথ্যানুযায়ী, সিন্ধের মন্ত্রী চাচ পুরো অঞ্চলকে এক সাম্রাজ্যে একীভূত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সিন্ধ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি বর্তমান পাকিস্তানের এক প্রাচীন কাঠামো তৈরি করেছিল।
ইতিহাসবিদ ড. তাহির কামরান বলেন, পুরো পাকিস্তানই ছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্র, যেখানে পাঞ্জাব, বালুচিস্তান, তক্ষশিলা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার মতে, রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য “অতীতের সঙ্গে খাপ খায় না”।
‘কখনোই ভারতের অংশ ছিল না’—সিন্ধি বিশেষজ্ঞদের দাবি
সিন্ধু প্রদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আমির আলি চান্ডিয়ো বলেন,
“এই বক্তব্য স্পষ্ট সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার প্রকাশ। সিন্ধ কখনোই ভারতের অংশ হয়নি।”
তার মতে—
মুঘল দখল খুব অল্প সময় ছিল
সিন্ধি জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়েছিল
ব্রিটিশ দখলের পরও তারা স্বাধীন পরিচয় ধরে রেখেছিল
তিনি জানান—১৮৪৭ সালে সিন্ধকে জোর করে বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে যুক্ত করা হয়, এবং সিন্ধিরা দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আলাদা পরিচয় পুনরুদ্ধার করে।
পাকিস্তান গঠনে সিন্ধের ভূমিকা
চুগতাই মির্জা ইজাজউদ্দিনের গবেষণা অনুযায়ী—
পাকিস্তানের দাবিতে প্রথম প্রস্তাব পাশ করে সিন্ধ প্রাদেশিক আইনসভা
১৯৪৭ সালে সিন্ধ প্রথম পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়
ভারতের অংশ থাকার প্রশ্ন সিন্ধ কখনোই মানেনি
তিনি বলেন, সিন্ধ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম কেন্দ্র ছিল।
ভারতের আধিপত্য সিন্ধের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’
চান্ডিয়োর মতে—
“সিন্ধের জনগণ কখনো ভারতের আধিপত্য মানেনি। এখনো মানবে না।”
রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
বুদ্ধিজীবী ওয়াজাহাত মাসুদ বলেন—
“৭০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারত–পাকিস্তান দুই দেশই পৃথক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পথে এগিয়েছে। এ ধরনের মন্তব্য শুধু অযথা উত্তেজনা বাড়াবে।”
(নিচে থাকা ভেনেজুয়েলা সম্পর্কিত অংশ মূল রিপোর্টের ভিন্ন প্রসঙ্গ হওয়ায় বিভ্রান্তি এড়াতে বাদ দেওয়া হলো। এটি সিন্ধ–ভারত–পাকিস্তান ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কহীন।)