ঢাকা, সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫ | ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
Logo
logo

গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক সংকট বেড়েছে, একের পর এক আত্মহত্যা ও সহিংসতার ছায়া


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:১২ পিএম

গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক সংকট বেড়েছে, একের পর এক আত্মহত্যা ও সহিংসতার ছায়া

গাজার যুদ্ধে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বড় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ যুদ্ধ, গণহত্যা এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে সৈন্যদের মানসিক চাপ সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক লাখ রিজার্ভ সেনা তাদের ছুটি শেষ হওয়ার পরও কাজে ফেরেনি।

তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ এবং ২০২১ সালে ছিল ১১ জন।

সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে ২৭ জুলাই, যখন রিজার্ভ সেনা অ্যরিয়েল মিয়া তামান দক্ষিণ ইসরায়েলে নিজের বাসায় আত্মহত্যা করেন। এর আগে ৫ জুলাই গাজা ও লেবাননে দায়িত্ব পালন করা রিজার্ভ সেনা ড্যানিয়েল এদ্রি আত্মহত্যা করেন। তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD)-এ আক্রান্ত ছিলেন।

জুলাই মাসে আরও দুই আইডিএফ সেনার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘সন্দেহজনক আত্মহত্যা’ হিসেবে দেখছে। ১৫ জুলাই দক্ষিণ ইসরায়েলের এক ঘাঁটিতে প্যারাট্রুপার ড্যান ফিলিপসন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জানুয়ারি ২০২৫-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী—২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০২৩ সালের শুরুতে আরও ১০ সৈন্য আত্মহত্যা করেন। দুই বছরে মোট ৩৮ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন।

এই তালিকায় যারা দায়িত্বের বাইরে অবস্থায় আত্মহত্যা করেছেন, তাদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

মানসিক সমস্যার মূল কারণ

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে মানসিক সমস্যা নতুন কিছু নয়, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার গণহত্যা এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সঙ্গে এই আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কিত।

গত দুই বছরের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু। অনেক শিশু পুড়ে গেছে বা অঙ্গহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ইস্তানবুলের ইবনে খালদুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রমা মনোবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সাঈদা এরুয়ার বলেন,
“গাজার যুদ্ধে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধজনিত ট্রমার পাশাপাশি বেসামরিক জনগণের ওপর সহিংসতায় অংশ নেওয়া বা তা প্রত্যক্ষ করার কারণে গভীর নৈতিক মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছেন।”

তিনি আরও বলেন, এই নৈতিক আঘাত PTSD-র সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও একে আলাদা ও ভিন্ন অবস্থা হিসেবে দেখা যায়।