ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫ | ৮ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

কেরলে তুঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল বিরোধ, সিপিএমকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তুলনা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:০৯ পিএম

কেরলে তুঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল বিরোধ, সিপিএমকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তুলনা

কেরলে তুঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল বিরোধ, সিপিএমকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তুলনা


 বাংলার রাজ্যপাল থাকার সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে গিয়ে তুমুল বিক্ষোভের মুখে ফিরে আসতে হয়েছিল জগদীপ ধরকড়কে (Jagdeep Dhankar)। রাজভবনে ফিরে এসে অভিযোগ করেছিলেন, বলা সত্ত্বেও তাঁকে হেনস্থাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য প্রশাসন। এমনকী পুলিশ পর্যন্ত ডাকেননি উপাচার্য।
কেরলের (Kerala Political Debate) রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের সঙ্গে রাজ্যের সিপিএম সরকারের বিরোধী গোড়া থেকেই। সম্প্রতি তা চূড়ান্ত রূপ ধারন করেছে আচার্য হিসাবে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা তাঁর হাত থেকে কেড়ে নিতে রাজ্য সরকার বিধানসভায় বিল পাশ করানোয়। প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই বিলে তিনি স্বাক্ষর করবেন না। যেমন রাজ্যপাল থাকাকালে উপাচার্যদের পুনর্নিয়োগের ফাইলে সই করেননি ধনকড় এবং ছাড়পত্র দেননি মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার বিলেও।
সোমবার দুপুরে একেবারে ধনকড় মডেল অনুসরণ করে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন রাজ্যপাল আরিফ। গতকালই ঘোষণা করেছিলেন, সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের মুখোস খুলে দেবেন। পূর্ব নির্ধারিত সেই সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম পার্টি এবং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে নজিরবিহীনভাবে নিশানা করেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান (Arif Mahommad Khan)। বলেন, বাম-গণতান্ত্রিক জোটে আহ্বায়ক ইপি জয়রাজন এমন একজন ব্যক্তি যাঁকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয় না যাত্রীদের উপর হামলা করার অভিযোগ থাকায়। এই সরকারের একজন মন্ত্রী সংবিধানের গুরুত্ব নিয়ে গুরুতর আপত্তি তুলে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন। আর একজন প্রাক্তন মন্ত্রী পাকিস্তানের ভাষায় ভারতের অখণ্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এরপর সাংবাদিকদের উদ্দেশে রাজ্যপাল প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন আপনারা কি মনে করেন এগুলি নিছকই ব্যক্তিবিশেষের আচরণ, মন্তব্য। তিনি সরাসরি জঙ্গিপনা শব্দটি ব্যবহার না করলেও বোঝানোর চেষ্টা করেন, সিপিএম একটি জঙ্গিবাদী দল, এমনটাই রাজ্যপালের কথায় মনে হয়েছে উপস্থিত সাংবাদিকদের। আরিফ মহম্মদ খান বলেন, এইভাবে সিপিএম ক্যাডারদের ব্রেন ওয়াস করে।
 
সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে রাজ্যপাল একটি ভিডিও ক্লিপ হাজির করে দাবি করেন, ২০১৯-এ কান্নুরে ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের উদ্বোধন করতে গেলে তাঁরে হেনস্থা করা হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। রাজ্যপালের অভিযোগ তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে বলেছিলেন তাঁকে বাধা দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ যেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
রাজ্যপালের অভিযোগ আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকার তাঁর কথা কানে তোলেনি। তিন বছর আগের ঘটনা আজ আবার সামনে এনেছেন কেন রাজ্যপাল? তাঁর অভিযোগ সেদিন বিক্ষোভকারীদের মদতদাতা এবং পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বাধা দেন সিপিএম নেতা কে কে রাগেশ। সেই সিপিএম নেতাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনীতি বিষয়ক) পদে বসেছেন। তিনিই রাজ্য প্রশাসনকে চাপ দিয়ে ব্যবস্থা নিতে দিচ্ছেন না। এমনকী রাগেশও বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বলে আরিফ মহম্মদ খানের অভিযোগ।
রাজ্যপাল রাজভবনে বসে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস এবং তাঁর সহকারীর নাম করে অভিযোগ করায় পাল্টা মুখ খোলেন পিনারাই বিজয়ন (pinarayi vijayan)। তিনি বলেন, বিজেপি ঈশারায় রাজ্যপাল এসব কাল্পনিক অভিযোগ করছেন।

যদিও সূত্রের খবর, রাজ্যপালকে নিরস্ত্র করতে আজ মুখ্যসচিব ভিপি জয়কে রাজভবনে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই। বিশ্বস্ত সূত্রে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, রাজ্যপাল তাঁর অফিসকে নিশানা করতে চলেছেন। ঘটনাচক্রে মুখ্যসচিবের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক মধুর। মুখ্যমন্ত্রী তাই শীর্ষ আমলাকে পাঠিয়েছিলেন শান্তি বার্তা পৌঁছে দিতে। কিন্তু রাজ্যপাল দমেননি।
যদিও সিপিএম সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, শান্তি বার্তা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। মুখ্যসচিব গিয়েছিলেন ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে। সেই সঙ্গে মুখ্যসচিবকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে বার্তা দিয়েছেন তিনি আর এগোলে রাজ্য সরকারও সীমা লঙ্ঘন করতে বাধ্য হবে। 

ওয়াকিবহাল মহলের খবর, পিনারাই চেয়েছিলেন রাজ্যপাল যাতে তাঁর অফিসকে নিশানা না করেন। যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল বারে বারেই বলেন, কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করা আর তাঁর অফিস এবং ব্যক্তিগত সচিবকে নিশানা করার মধ্যে ফারাক আছে। রাজ্যপাল ব্যক্তি পিনারাইকেই নিশানা করায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।

রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতিতে কী করতে পারে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্যপালকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করার পাশাপাশি তাঁর আচরণের নিন্দা করে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করাতে পারে সরকার পক্ষ। তাতে কংগ্রেসও বিপাকে পড়বে। কারণ, রাজ্য-রাজ্যপাল বিরোধে বিরোধী দল কংগ্রেস রাজ্যপালের পক্ষ নেওয়ায় সিপিএম কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সেটিংয়ের অভিযোগ তুলেছে। সেই কারণে আজ রাজ্যপালের সাংবাদিক বৈঠকের পর সংযত ও কৌশলী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে সুধাকরণ। তিনি বলেছেন, রাজ্যপালের অভিযোগ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। 

তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএম সরকার বড় ধরনের রাজনৈতির আক্রমণের রাস্তায় হাঁটবেন ধরে নিয়ে আরিফ মহম্মদ খানও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। এমনিতেই তিনি বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল ধনকড়ের মতো কথায় কথায় রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য সরকারকে নিশানা করছেন। জেলা সফরে গেলে তাঁর কর্মসূচিতে সাংবাদিক সম্মেলনের জন্য সময় বরাদ্দ থাকছে।
কান্নুরের ঘটনা নিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নিলে তিনি রাষ্ট্রপতির অনুমতি চাইবেন ফৌজদারি দন্ডবিধির ১২৪ নন্বর ধারা বলে রাজ্যপালের অফিসের তরফে মামলা করার। সাংবিধানিক পদাধিকারীদের কাজে বাধা দিলে ওই ধারায় মামলা হয়।

খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে