ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫ | ৮ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

ধর্মতলা অচল করে বামেদের সভা ম্যাটাডোরে, ‘‌ইনসাফে’‌ সংযম দেখাল মমতার পুলিশ


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:০৯ পিএম

ধর্মতলা অচল করে বামেদের সভা ম্যাটাডোরে, ‘‌ইনসাফে’‌ সংযম দেখাল মমতার পুলিশ

ধর্মতলা অচল করে বামেদের সভা ম্যাটাডোরে, ‘‌ইনসাফে’‌ সংযম দেখাল মমতার পুলিশ


 বামেদের নতুন প্রজন্মের ‘‌ক্যাপ্টেন’‌ মীনাক্ষী আগেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘‌সভা হবে ওখানেই।’‌ আর হলও তাই। তবে কোনও মঞ্চে নয়, ‘‌ইনসাফ সভা’‌ হলো একটা ম্যাটাডোরে। হাওড়া থেকে ক’‌য়েক হাজার মানুষের মিছিল ঢুকলেই পাল্টে যাবে সভাস্থল, আগে থাকতেই এই ছক কষা ছিল। যেকারণে ভিক্টোরিয়া হাউসের অদূরেই তৈরি ছিল তক্তোপোশ বাঁধা একটি ট্যাবলো। ঠিক দুপুর দেড়টা নাগাদ, ওয়াই চ্যানেলের সভামঞ্চ থেকে ডিওয়াইএফআই–এর সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee) ফের ঘোষণা করলেন, সভা হবে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই। ঘোষণা শেষ হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে ধর্মতলা চত্বর। এবং সেই ম্যাটাডোরই হয়ে উঠল অস্থায়ী সভামঞ্চ।

ধর্মতলা চত্বর মঙ্গলবার সকাল থেকেই সাদা পতাকায় মোড়া ছিল। চারিদিকেই লাগানো ছিল ‘ইনসাফ সভা’র প্লাকার্ড। মীনাক্ষীরা ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভার অনুমতি চেয়েছিলেন। লালবাজারে গিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেছিলেন মীনাক্ষীরা (Minakshi Mukherjee)। কিন্তু পুলিশ কোনওভাবেই অনুমতি দেয়নি। তাই ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে মঞ্চ বাঁধেন তাঁরা। কিন্তু সেখানে যে সবাইকে জায়গা দেওয়া যাবে না, তা আগেভাগেই জানা ছিল মীনাক্ষী, প্রতীকউরদের। যেকারণে শিয়ালদহে তৈরি করা হয়েছিল ওই ম্যাটাডোর। যা মোক্ষম সময়ে উঁচু মঞ্চের চেহারা নেবে।
এদিনের ছাত্র–যুবদের সমাগম এক কথায় ছিল বিপুল। তৃণমূলের ২১ জুলাই (21 July) ছাড়া, এতবড় সমাগম ধর্মতলায় সাধারণত হয় না, বলে জানিয়েছেন আশেপাশের বিক্রেতারাই। এবং বামেদের কাছেও ওই ভিড় কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিল বলেই জানা গেছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাজার হাজার বাম সমর্থক ভিড় জমিয়েছিলেন। শুধু ছাত্র–যুবরাই নয়, এসেছিলেন বহু প্রবীণ কর্মী–সমর্থক। সভায় নজর কেড়েছে আনিস খানের বিশাল প্লাকার্ড। উপস্থিত ছিলেন আনিসের বাবা সালেম খান। প্রয়াত এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর কাট–আউটও দেখা যায় ধর্মতলার ভিড়ে।

সভা ঘিরে গোলমালের আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল ধর্মতলা চত্বরে। যখন বামেরা কেসি দাশের মিষ্টির দোকানের ঠিক উল্টোদিকে ট্যাবলোয় সভা শুরু করেন, তার আগেই দফায় দফায় ঢোকা লাল মিছিলের ভিড়ে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায় ধর্মতলা। ব্যাপক যানজট শুরু হয়। পুলিশ ময়দানের দিক থেকে আসা গাড়ি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে প্রশাসনকে চূড়ান্ত সংযত থাকতে দেখা গিয়েছে এদিন। বাম ছাত্র–যুবদেরও কোনও বিশৃঙ্খল আচরণ করতে দেখা যায়নি।

এদিন মেট্রো শপিং মলের সামনে বহু যুব–ছাত্র রাস্তায় বসেছিলেন। কিন্তু পুলিশের তরফে তাঁদের কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। রাস্তা আটকে যাওয়ার পরও পুলিশ যথেষ্ট সংযমী ছিল। ট্রাফিক ও পুলিশকর্মীদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে দেখা গিয়েছে দিনভর। সভায় কেউ যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেদিকেও কড়া নজর ছিল পুলিশের। বলা যেতে পারে, বামেরা যাতে সভা শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যেতে পারে, সেদিকেই নজর ছিল পুলিশের। বাম কর্মী–সমর্থকদের অনেকেও পুলিশের এদিনের ভূমিকায় কিছুটা অবাক হয়েছেন বলে জানালেন।

সভায় বক্তব্য পেশ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Selim)। নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূল এবং বিজেপিকে আগাগোঁড়া চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, ‘বিজেপির এজেন্ট হিসাবে এই রাজ্যে কাজ করছে মমতা ব্যানার্জি। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার নাম বদল নিয়ে যেমন সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করছে, ঠিক এই রাজ্যেও নাম বদল নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলছে মমতা ব্যানার্জি।

সেলিম রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee) প্রথম যেই জায়গার নাম বদল করে তা হচ্ছে আলিপুর ব্রিজ। আলিপুর ব্রিজের নাম বদল করে তার নাম রাখেন ধনধান্য ব্রিজ।’ মহম্মদ সেলিমের পাশাপাশি মীনাক্ষী, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, ময়ুখ বিশ্বাস, সৃজন ভট্টাচার্য্য, প্রতীকুর রহমান, আনিস খানের বাবা সালেম খান বক্তব্য পেশ করেন। সবমিলিয়ে এদিনের সভা বামেরা চেয়েছিল শাসকদলকে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে। বিপুল জমায়েতে বামেদের এদিনের সভা সফল বলেই দাবি তাদের।

।খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে