ঢাকা, মঙ্গলবার, এপ্রিল ২২, ২০২৫ | ৮ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

মার্কিন দৈনিকে মোদী সরকারের নিন্দা, ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আর্জি জানিয়ে বিজ্ঞাপন


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১৬ অক্টোবর, ২০২২, ০৯:১০ পিএম

মার্কিন দৈনিকে মোদী সরকারের নিন্দা, ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আর্জি জানিয়ে বিজ্ঞাপন

মার্কিন দৈনিকে মোদী সরকারের নিন্দা, ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আর্জি জানিয়ে বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে সরকারি এজেন্সিগুলিকে এমনভাবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে আইনের শাসন ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে সে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনটির (US Newspaper Advertisement) মূল বক্তব্য এটাই।
জনপ্রিয় মার্কিন বাণিজ্যিক দৈনিক ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রথম পাতায় এমনই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে ভারত সম্পর্কে। সেই সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে অন্তত ১২ জন ভারতীয় পদাধিকারীর বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং তার মিত্র রাষ্ট্রগুলিকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। সেই তালিকায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের (Nirmala Sitharaman) নামও আছে। এছাড়া আছে ইডি, সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থার কয়েকজন পদাধিকারীর নাম। বিজ্ঞাপনে সীতারমন-সহ কয়েকজনের ছবিও ছাপা হয়েছে। 
শনিবারের কাগজে ওই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। ঘটনাচক্রে অর্থমন্ত্রী নির্মলা এখন আমেরিকায় রয়েছেন। বিশ্বব্যাঙ্ক (World Bank), আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে তিনি সে দেশে গিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, তাঁর সফরের সময়টি মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে। নাম রয়েছে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতারও।
দেশে বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একাংশের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছে। তাদের বক্তব্য সিবিআই, ইডি, আয়কর হানার মাধ্যমে তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য যাতে তারা বিরোধী দলগুলিকে অর্থ দিয়ে সাহায্য না করে। 
তবে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীও (Rahul Gandhi) এখনও পর্যন্ত এমন কঠোর মন্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে করেননি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান-সহ আরও কিছু দেশের ক্ষেত্রে এমন নজির আছে যেখানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে বিদেশের মাটিতে বিরোধীরা শুধু সরব হয়, তাই-ই নয়, দেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচার সংস্থাকে বিদেশে কাজে লাগায়।
বাংলাদেশ এখন এমনই এক ইস্যুতে উত্তাল। সে দেশের শাসক দল আওয়ামী লিগ ও সরকারের অভিযোগ, বিরোধী দল বিএনপি বিদেশে কয়েক হাজার ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। যাঁরা বিদেশে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার হরণের অভিযোগে সরব। প্রসঙ্গত, মাস কয়েক আগে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের সেনা, পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার উপর মার্কিন সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওই পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে গুম খুনে যুক্ত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে জারি করা বিজ্ঞাপনটিতে মার্কিন সরকারকে তাদের গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি আইনের অধীনে অর্থনৈতিক ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আর্জি জানানো হয়েছে। ২০১৬ সালে চালু ওই আইনের মূল কথা হল, মানবাধিকার হরণকারীদের আমেরিকা ও তাদের মিত্র দেশগুলিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
ওই আইনে রাশিয়ার কারাগারে আইনজীবী সের্গেই ম্যাগনিটস্কির মৃত্যুর জন্য দায়ী রাশিয়ান কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সৌদি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও ওই আইনে ব্যবস্থা নিয়েছে আমেরিকা। এছাড়া মায়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নিধন যজ্ঞ, এবং চীনা কর্মকর্তারা জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পদক্ষেপ করে আমেরিকা। 
প্রসঙ্গত, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৫ সালে নরেন্দ্র মোদীকে আমেরিকা সফরে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল মার্কিন প্রশাসন। গুজরাত দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ওই পদক্ষেপ করে তারা। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় তখন মনমোহন সিংহের সরকার। তারা মার্কিন প্রশাসনকে চাপ দিয়ে মোদীর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় তখন। কারণ, বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর উপর নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা পরবর্তীকালে ভারতের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারত। এখন সেই নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মার্কিন পত্রিকায় দেশে আইন শাসনের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকার কাগজে এই বিজ্ঞাপন দিল কে?
প্রাথমিকভাবে ভারতীয় কর্মকর্তারা মনে করছেন এর পিছনে আছেন প্রবাসী ব্যবসায়ী রামচন্দ্রন বিশ্বনাথন এবং তার সমর্থকরা। ভারত সরকার তাঁর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করায় দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের আদালতেই আইনি লড়াই চলছে। দুই দেশের আদালতই তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। ওই বিজ্ঞাপন নিয়ে মার্কিন প্রবাসী আর এক ব্যবসায়ী আশা জাদেজা মোতওয়ানি টুইটে পাল্টা আঘাত করেছেন। বলেছেন, হিন্দু বিদ্বেষীর এমন বিজ্ঞাপন মোদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভুল স্বীকার করা উচিত এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপন ছাপানোর জন্য।


খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে