ঢাকা, শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫ | ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১
Logo
logo

সৌদি আরবে বিন সালমানের কথিত সংস্কার: মানবাধিকার সংস্থা বলছে নিছক 'আইওয়াশ'


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০২ নভেম্বর, ২০২২, ০৫:১১ পিএম

সৌদি আরবে বিন সালমানের কথিত সংস্কার: মানবাধিকার সংস্থা বলছে নিছক 'আইওয়াশ'

সৌদি আরবে বিন সালমানের কথিত সংস্কার: মানবাধিকার সংস্থা বলছে নিছক 'আইওয়াশ'


আমেরিকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত রিমা বিনতে বন্দর আল সৌদ মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সৌদি আরবে সংস্কার বাস্তব ঘটনা এবং দেশটি গত পাঁচ বছরে এমন ব্যবস্থা এবং পদক্ষেপ নিয়েছে যা গত ৮০ বছরেও করা হয়নি। তবে তার এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয়-সৌদি মানবাধিকার সংস্থা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কথিত সংস্কারকে মিথ্যা ও ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

২০১৭ সালের জুন মাসে মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত হন।  বিন সালমান গত ৫ বছরে  সৌদি আরবে সামাজিক ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছেন। যেমন তিনি তার দেশের মহিলাদেরকে গাড়ি চালানোর অধিকার দেয়ার পাশাপাশি কনসার্ট করার অনুমতি দিয়েছেন এবং তাদেরকে স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা দেখার অনুমতি দিয়েছেন। এদিকে, বিন সালমান এই পদক্ষেপগুলোকে সংস্কার বলে অভিহিত করেছেন যদিও এগুলো সবই একটি দেশের নারীসহ প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে বিবেচিত হয় এবং কিন্তু সৌদি যুবরাজ সৌদি নারীদের রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ নেননি। 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক আইনের বিশ্লেষকরা মোহাম্মদ বিন সালমানকে কেবল একজন সংস্কারবাদী নেতা হিসেবেই বিবেচনা করেন না বরং তাকে একজন কর্তৃত্ববাদী ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বব্যবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি সৌদি আরবকে একটি একঘরে বা বর্জনীয় রাষ্ট্রে হিসেবে পরিণত করবেন। বাইডেনের এই মন্তব্যের মূল কারণ ছিল সৌদি আরবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের ঘটনা। তাই বিন সালমানের কথিত সংস্কার বিশ্বব্যবস্থায় সৌদি আরবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত  খোদ আমেরিকাও মেনে নেয়নি। 

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সৌদি আরবে কিছু সামাজিক বিধিনিষেধ অপসারণ করলেও দেশটিতে রাজনৈতিক দমনপীড়ন এবং নিষ্পেষণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই এই প্রসঙ্গে সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে কাজ করা ইউরোপীয়-সৌদি মানবাধিকার সংস্থা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাজা, অন্যায্য মৃত্যুদণ্ড, মানবাধিকার কর্মীদেরকে জোরপূর্বক দেশান্তরিত করা এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেে নানামুখী দমনপীড়ন-এসব কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সৌদি আরবে আনিত পরিবর্তনগুলোকে কোনোভাবেই সংস্কার বলা যায় না।  

তাই সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা ইউরোপীয় সংস্থা তার বিবৃতিতে আরো  জোর দিয়ে বলেছে  যে আলে সৌদ সরকার গত পাঁচ বছরে যে পরিবর্তনগুলো নিয়ে গর্ববোধ করে তার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা দ্বিগুণ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যার মধ্যে  শিশুসহ এক হাজার ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। পরিশেষে সৌদি আরবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুহাম্মদ বিন সালমান যা করেছেন তা প্রকৃত সংস্কার এবং মানবাধিকার মূল্যবোধের প্রতি উৎসাহী হয়ে নয় বরং সৌদি আরবের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে দেশটিতে অপরাধ প্রবণতা এবং সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে।
 খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে