এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:১২ পিএম
সাম্যবাদী হয়ে উঠছে বিশ্বকাপ
কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের সমাপ্তি ঘটেছে। মরুর বুকে আয়োজিত এই বিশ্বকাপ পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের একটি ইতিবাচক মেসেজ দিয়েছে। আর মেসেজটি হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার প্রাধান্যের দিনক্ষণ শেষ হয়ে আসছে। এশিয়া আর আফ্রিকা বিশ্ব ফুটবলে তাদের হিস্যা বুঝে নিতে এগিয়ে আসছে। ফলে শক্তির ব্যবধান কমে সাম্যবাদী হয়ে উঠছে ফুটবল।
এবারের বিশ্বকাপে পাঁচটি বিশ্বকাপজয়ী দেশ গ্রুপ পর্বে অন্তত একটি ম্যাচে হেরেছে। তাদের মধ্যে ব্রাজিল পাঁচবার, জার্মানি চারবার, আর্জেন্টিনা দুবার, ফ্রেঞ্চ দুবার এবং স্পেন একবার শিরোপা জিতেছে। এরাই আবার বিশ্বকাপের শিরোপাপ্রত্যাশী দল। অথচ যাদের কাছে তারা হেরেছে, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সেসব দেশ অনেক নিচের সারিতে অবস্থান করছে।
বিশ্বকাপজয়ী দল ইংল্যান্ডই শুধু বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে কারও কাছে হারেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ঘাম ছুটিয়ে ছেড়েছে। অবশ্য কোনো দলই শতভাগ জয়ে রেকর্ড ধরে রাখতে পারেনি।
একটি দেশ সাধারণত নিজ মহাদেশীয় দেশগুলোর বিপরীতে বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। আর এসব ম্যাচের ফলের ভিত্তিতেই ফিফা র্যাঙ্কিং স্থির করা হয়। কিন্তু বিশ্বকাপের ম্যাচে সব মহাদেশের দলগুলো পরস্পরের বিপক্ষে মাঠে নামার নামার সুযোগ পায়। এবারের বিশ্বকাপের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নকআউট পর্বে বিশ্বের সব মহাদেশের দলই খেলার সুযোগ পেয়েছে। এ ঘটনা এর আগে ঘটেনি। গ্রুপ পর্বের শুরুতে সউদি আরব লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দলকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ডেনমার্ক-তিউনিসিয়া এবং পোল্যান্ড-মেক্সিকো ম্যাচ ড্র হয়। পরে জাপান জার্মানিকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে। একই দিন মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।
এবারে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে যে দুটি দল কোনো ম্যাচ জেতেনি, তারা হলো কানাডা ও স্বাগতিক কাতার। তবে মরক্কো যেভাবে ২-০ গোলে বেলজিয়ামকে হারাল অথবা সৌদি আরব যেভাবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে লড়েও হারল, অথবা দক্ষিণ কোরিয়া আর উরুগুয়ের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অথবা ক্যামেরুন ও সার্বিয়ার ৩-৩ গোলের লড়াইটি এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, ফুটবল বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এবং আগামী দিনগুলোতে ফুটবলে নতুন নতুন দেশ বেশ এগিয়ে যাবে। ফুটবলে ইউরোপিয়ান ও লাতিন আমেরিকার কৌলিন্য আর বজায় থাকছে না। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ক্যামেরুন ব্রাজিলকে হারায়।
কাতার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এশিয়ার দুটি দেশ, আফ্রিকার দুটি দেশ, উত্তর আমেরিকা ও ওসানিয়া অঞ্চলের একটি, ইউরোপের আটটি এবং দক্ষিণ আমেরিকার দুটি দেশ সুযোগ পেয়েছে। তবে বড় বড় দলগুলোকে হারিয়ে ছোট ছোট দলগুলো যে চমক দেখিয়েছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয়, বিশ্বের ফুটবলের মান বাড়ছে। এশিয়ানদের পাশাপাশি আফ্রিকানরাও এখন ভালো খেলছে। কাউকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ আর থাকছে না। হয়তো আগামীতে বিশ্বকাপে সহজ প্রতিপক্ষ বলে কোনো কিছু থাকবে না।
এনবিএস/ওডে/সি