ঢাকা, সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫ | ৩ চৈত্র ১৪৩১
Logo
logo

বাচ্চা তৈরির কারখানা! এক বছরে জন্মাবে ৩০ হাজার নিখুঁত শিশু, ঠিক যেমনটি চান


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:১২ পিএম

বাচ্চা তৈরির কারখানা! এক বছরে জন্মাবে ৩০ হাজার নিখুঁত শিশু, ঠিক যেমনটি চান

বাচ্চা তৈরির কারখানা! এক বছরে জন্মাবে ৩০ হাজার নিখুঁত শিশু, ঠিক যেমনটি চান


মায়ের সঙ্গে নাড়ির টান বুঝি এবার ঘুচল।
নিজের গর্ভে শরীরের রক্ত-মাংস নিয়ে তিলে তিলে সন্তানকে গড়ে তোলার দিন হয়ত শেষ হবে ভবিষ্যতে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য আর মায়ের গর্ভের দরকার পড়বে না। কৃত্রিম গর্ভেই (Artificial Womb Factory) বড় হবে সন্তান। মায়ের শরীরের গন্ধ ছাড়াই জন্ম নেবে গবেষণাগারে। সে হবে নিখুঁত, নীরোগ। শরীরে কোনও খুঁত থাকবে না, রঙ-রূপ ইচ্ছামতো বদলে দিতে পারবেন মা-বাবা। কোনও অসুখ থাকবে না। সে বাচ্চাকে লড়াই করে জন্ম নিতে হবে না, কৃত্রিম গর্ভ থেকে সরাসরি পৃথিবীর আলো দেখাবেন গবেষকরা। তার বুদ্ধিমত্তাকে শান দিয়ে প্রখর করা হবে। এমনই সুপার-বেবি চাইলে এগিয়ে যেতে হবে আরও কয়েকটা বছর।
বাচ্চা তৈরির কারখানা গড়ার স্বপ্ন দেখছেন ইয়েমেনের বিজ্ঞানী তথা মলিকিউলার বায়োটেকনোলজিস্ট হাশেম আল-ঘাইলি। কারখানা বলার কারণ হল এমন এক গবেষণাগার তৈরির পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানী যেখানে একই সঙ্গে হাজার হাজার সন্তানের জন্ম হবে। কৃত্রিম গর্ভে বড় করা হবে ভ্রূণকে। একসঙ্গে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হবে ল্যাবরেটরিতে। সবটাই কৃত্রিম উপায়ে। মাতৃগর্ভের দরকার পড়বে না, মাকে প্রসব যন্ত্রণাও ভোগ করতে হবে না (Artificial Womb Factory)।  

এই সবটাই সায়েন্স ফিকশনের গল্প বলে মনে হলেও আদতে এমনটা সত্যিই হতে পারে। অন্তত বিজ্ঞানী হাশেম আল-ঘাইলি এমনই দাবি করেছেন। সম্প্রতি এমনই একটি অ্যানিমেশন ভিডিও প্রকাশ করে হাশেম দাবি করেছেন, ভবিষ্যতে এরকম গবেষণাগার তৈরি সম্ভব। তাঁর গবেষণাকেন্দ্র এক্টোলাইফ (ECTOLIFE) এমনই ল্যাবরেটরি তৈরির চেষ্টা করছে যেখানে কৃত্রিম গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন মা-বাবারা। থ্রি-ডি টেকনোলজি ও রোবোটিক্সের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (Artificial Intelligence) শান দিয়ে এমন অসাধ্য সাধন করা সম্ভব বলেই জানিয়েছেন হাশেম।
মায়ের নাড়ির টান থাকবে না, কিন্তু সন্তান মাকে শুনতে-অনুভব করতে পারবে
এক্টোলাইফের কৃত্রিম গর্ভের ল্যাবরেটরি (Artificial Womb Factory) এখনও পরিকল্পনাতেই রয়েছে। গবেষণাগারের সম্ভাব্য গঠন, তার প্রযুক্তি, কৃত্রিম গর্ভে শিশুকে বড় করে তোলার কৌশল, গবেষণাগারেই প্রসবের পদ্ধতি–এইসবেরই সম্ভাব্য ভিডিও সামনে এনেছেন বিজ্ঞানী।;
কেমন হবে সেই বাচ্চা তৈরির কারখানা?
৭৫টির বেশি ল্যাবরেটরিতে চারশোর বেশি কৃত্রিম গর্ভ বা বেবি পড (Baby Pod) বা গ্রোথ পড (growth pod) থাকবে। গোল গোল কাচের বাক্সের মতো যন্ত্রই হল সেই গর্ভ যেখানে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হবে। ওই বাক্সগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অপ্রচলিত শক্তি বা সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি থেকে তৈরি বিদ্যুতে পাওয়ার সাপ্লাই হবে বাক্সে। কাজেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 
আইভিএফ (Invitro Fertilization) পদ্ধতিতে মায়ের ডিম্বানু ও বাবার শুক্রাণু মিলিয়েই ভ্রূণ তৈরি হবে। সেই ভ্রূণ মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপন না করে সেই কৃত্রিম গর্ভে রাখা হবে। তারপর সেখানে বড় হতে থাকবে শিশু।
বিজ্ঞানী হাশেম বলছেন, বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়ার জন্য দু’রকম বায়োরিয়্যাক্টর (Bioreactor) থাকবে। একটি থেকে দরকারি পুষ্টিকর উপাদান বাচ্চার শরীরে ঢুকবে। অন্যটিতে বর্জ্য জমা হবে। বায়োরিয়্যাক্টর দুটি থেকে দুটি কেবলের মতো তার জোড়া থাকবে প্রতিটি বেবি পডে। 

এবার মনে হতে পারে, বাচ্চা তার মাকে অনুভব করতে পারছে না। মায়ের গর্ভে থাকার সময় বাচ্চা তার মায়ের কণ্ঠস্বর গর্ভেই শুনতে পায়। জন্মের পরে সেই কণ্ঠস্বর শুনে সে চিনতে পারে তার গর্ভধারিনীকে। বিজ্ঞানী হাশেম বলছেন, মায়ের শরীরের স্পর্শ পাবে না ঠিকই, কিন্তু বেবি পডে এমন ব্যবস্থা থাকবে যাতে মায়ের গলার আওয়াজ বাচ্চা শুনতে পাবে। দরকার হলে মা তাঁর আওয়াজ রেকর্ড করে বাচ্চাকে শোনাতে পারে। নিজের পছন্দের গান বা নিজের গলার গান, কবিতা বাচ্চাকে শোনাতে পারে। 
বেবি পডে যতবার বাচ্চা নড়াচড়া করবে, ততবারই সেই স্পর্শের অনুভূতি ধরে রাখা হবে। পরে তা দেখানো হবে মাকে। বেবি পডে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা থাকবে যার সাহায্যে বাড়িতে বসেই মা প্রতি মুহূর্তে বাচ্চার নড়াচড়া দেখতে পারবেন, তার শ্বাস নেওয়া অনুভব করবেন। 
কৃত্রিম অ্যাম্বিলিকাল কর্ড থাকবে বেবি পডে। প্রসবের সময় কৃত্রিম গর্ভ থেকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড (amniotic fluid) বেরিয়ে যাবে। তখন সন্তানের জন্ম হবে। পুরো প্রক্রিয়াটাই গবেষণাগারে বা বাড়িতে বসেই দেখতে পাবেন মা-বাবা। প্রসব যন্ত্রণা ছাড়াই সুস্থ সন্তানের জন্ম হবে।

গর্ভেই সন্তানের রূপ-রঙ বদলানো যাবে
 কেমন গায়ের রঙ চান? কেমন হবে বাচ্চার চুল? কেমন হবে চোখের রঙ? যা মন চায় তেমনই গড়ে দেবেন বিজ্ঞানীরা। 
ক্রিসপার ক্যাস-৯ জিন এডিটিং পদ্ধতিতে জিনের বিন্যাসের অদলবদল করে বাচ্চার গায়ের রঙ, চুলের ধরন, চোখের মণির রঙ সব পাল্টানো যাবে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা বসে থাকবেন হুকুমের অপেক্ষায়। বাচ্চার ওজন, উচ্চতা মনের মতো করে গড়ে নিতে পারবেন মা-বাবারা।(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); 
বিজ্ঞানী হাশেমের দাবি, এই কারখানায় কোনও অসুস্থ বাচ্চা বা প্রিম্যাচিওর বাচ্চা জন্মাবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুবিধায় জিনের সাজসজ্জাই বদলে দেবেন বিজ্ঞানীরা। বাচ্চা হবে সম্পূর্ণ সুস্থ, রোগহীন। জেনেটিক রোগের সম্ভাবনা থাকলে তা আগে থেকেই সারিয়ে দেওয়া হবে। বাচ্চা হবে ‘সুপার ইনটেলিজেন্ট’। ঠিক যতটা মেধা চান মা-বাবা, তার সবটাই ভরে দেওয়া হবে বাচ্চার ব্রেনে। শরীরে, মনে, বুদ্ধিমত্তায় সামান্য খুঁতও থাকবে না। বাচ্চা খুব শক্তিশালীও নাকি হবে।

চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েরা এখন নিজের গর্ভে সন্তান চাইছেন না। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ঝক্কিও অনেক। তাছাড়া বিশ্বজুড়েই এখন ব্যস্ততা বেড়েছে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার মতো সময় ও কষ্ট কোনও মাই নাকি চাইছেন না। তাই সহজ উপায়ে ও গ্যারান্টি সহকারে বাচ্চা তৈরি করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ইয়েমেনের বিজ্ঞানীরা। 
তবে সবই হবে। খোদার উপর খোদকারি করে সন্তানের জন্মও হয়ত হবে। কিন্তু সম্পূর্ণ নিখুঁত সুপার-হিউম্যান মায়া-মমতা-ভালবাসায় ভরা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবে কিনা, সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।

 খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে