ঢাকা, মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫ | ৩ চৈত্র ১৪৩১
Logo
logo

সান্তা ক্লজকে নাদুসনুদুস মোটাসোটা দেখানো বন্ধ হোক, কেন বললেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৯:১২ পিএম

সান্তা ক্লজকে নাদুসনুদুস মোটাসোটা দেখানো বন্ধ হোক, কেন বললেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী

সান্তা ক্লজকে নাদুসনুদুস মোটাসোটা দেখানো বন্ধ হোক, কেন বললেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী

 গোলগাল মিষ্টি চেহারার সান্তা ক্লজ দেখেই অভ্যস্ত আমরা। নাদুসনুদুস গড়ন, একগাল হাসি ছড়িয়ে উপহারের ঝোলা নিয়ে আসছে সান্তা–এমনটাই ভেবে এসেছি আমরা। কিন্তু এখন সান্তার এমন চেহারা নিয়েই আপত্তি তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আর এই বিষয়টা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। মোটাসোটা সান্তা চলবে না–সান্তাকে এমন মোটা দেখানো বন্ধ হোক—তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সেই বিজ্ঞানী। 
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট চন্দ্রউইনাটা এমন দাবি তুলেছেন যা নিয়ে গোটা বিশ্বে হইচই চলছে। কেউ বলছেন, এতদিন ধরে চলে আসা ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দিতে চাইছেন বিজ্ঞানী, অন্যদলের মত, সান্তা ক্লজকে নিয়েও ‘বডি শেমিং’ চলছে। এভাবে চেহারা নিয়ে মন্তব্য করা কুরুচির পরিচয়। 


যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর ২৮০ বছর পরে রোমের মাইরাতে জন্ম হয় সেন্ট নিকোলাসের। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারানো নিকোলাস জীবনের একমাত্র ভরসা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন যিশু খ্রিস্টের ওপরে। নিজে ছোটবেলায় অনাথ হয়ে যাওয়ায় গরিব শিশুদের খুব ভালবাসতেন তিনি। সেই কারণের গরিব শিশুদের উপহার দিয়ে বেড়াতেন। আকাশে যখন অর্ধেকটা চাঁদ থাকত, সেই সময় নিজেকে আড়াল করে উপহার দিতেন তিনি, যাতে তাঁকে চেনা না যায়। সেই কারণে সান্তা নামে পরিচিত হয়েছিলেন নিকোলাস। 
বর্তমান দিনে সান্তার যে চেহারা তা তৈরি করেন থমাস নাস্ট। হারপার উইলকি নামে একটি পত্রিকার জন্য লাল রঙের পোশাকে সান্টাকে আঁকেন তিনি। অনেকে মনে করেন যে কোকা কোলার একটি বিজ্ঞাপনে প্রথম সান্তাকে লাল রঙের পোশাকে দেখা যায়। সান্তার চেহারাতেও বদল আসে। রোগী নিকোলাসকে নাদুসনদুস সান্তা হিসেবেই দেখানো হয়। আগে সান্তার চেহারা ছিল খুবই খুদে। কারণ সব বাড়ির চিমনি দিয়ে তাঁকে উপহার পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভেতরে ঢুকতে হত। পরে সান্তার চেহারাকে বড়সড় করেন নাস্ট।সেই থেকেই ট্রাডিশন চলছে। আর এই নস্টালজিয়ায় বিজ্ঞানী অনধিকার প্রবেশ করছেন বলে দাবি করেছেন অনেকেই।
তবে অসি বিজ্ঞানী এত তর্ক-বিতর্কে কান দিচ্ছেন না। কেন এমন দাবি তিনি তুলেছেন, তা স্পষ্ট করেই বুঝিয়েছেন বিজ্ঞানী. ভিনসেন্টের মত, এখনকার সময় স্থূলত্ব বা ওবেসিটি সাঙ্ঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ ওবেসিটির শিকার। যে কারণেই এখন ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, কিডনির রোগ হানা দিচ্ছে ছোট বয়স থেকেই। ডিজিটাল বিশ্বে ওবেসিটি যেখানে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে সকলের প্রিয় আদুরে সান্তাকে মোটা দেখানোর মানেই হয় না। এর থেকেই ছোটরা অনুপ্রাণিত হবে। 
বিজ্ঞানীর দাবি, সান্তা ক্লজ নিয়ে রূপকথার স্বপ্ন বোনে বাচ্চারাই। কমবয়সিদের মধ্যে এখনও সান্তা ক্লজ নিয়ে নস্টালজিয়া আছে। কাজেই তারা যদি দেখে, সান্তা ক্লজও মোটাসোটা, তাহলে তারাও সে পথেই হাঁটবে। স্থূলত্ব নিয়ে আর ভাবনাচিন্তা করবে না। মানুষ তার পছন্দের চরিত্রকেই অনুসরণ করতে চায়, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হবে।
স্থূলত্বের কারণে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। হার্টের ক্ষমতা কমে, ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে। ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন অনেক রোগীই। অধিক স্থূলত্ব থেকে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভার, খাদ্যনালির রোগ এমনকি হরমোন ক্ষরণেরও তারতম্য দেখা দেয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ওজন বাড়ানো চলবে না কোনওভাবেই। 
বিজ্ঞানী বলছেন, বিঞ্জ ইটিং ডিসঅর্ডার এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় অসুখ। পেটের খিদের চেয়েও বেশি মনের খিদে। খুব আনন্দ হোক বা মনে ব্যথা পান, কেউ প্রশংসা করুক বা বকাঝকা খান, যে কোনও পরিস্থিতিতেই মন কিছু একটা চায়। আর সেটা খাবার হলেই বেশ হয়। আসলে পেটের খিদে নয়, এ হল মনের খিদে। সহজ করে বললে চোখের খিদে। প্রচণ্ড টেনশনেও খেতে ইচ্ছে করে আবার খুব ফূর্তি হলেও এটা ওটা খাওয়ার জন্য মন ছোঁকছোঁক করে। ফ্রিজে রাখা চকোলেট থেকে রঙিন আইসক্রিম, চিপস থেকে পেস্ট্রি—এইসব মুখরোচক খাওয়ারের দিকেই মনের যত আকর্ষণ। আর এটাই হল বিঞ্জ ইটিং ডিসঅর্ডারের লক্ষণ। গোটা বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এই রোগেই ভুগছে। আর হাতের কাছে অঢেল ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুডের প্রাচুর্য ওবেসিটিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্বে ওবেসিটি থাবা বসিয়েছে। ২০২০ সালে এসে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ৩ কোটির বেশি শিশু পাঁচ বছর বা তার নীচেই ওবেসিটির শিকার। শিশু ও কমবয়সি মিলিয়ে ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি প্রায় ৪ কোটির বেশি স্থূলত্বে ভুগছে। নানা কোমর্বিডিটিও রয়েছে তাদের। কাজেই ওবেসিটি প্রাধান্য পায়, এমন কোনও কিছু করাই ঠিক নয় বলে মত অসি বিজ্ঞানীর।


খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে