এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:০১ পিএম
আবাস যোজনার বাড়িতে তৃণমূলের পার্টি অফিস! সরকার বলল দুর্নীতি হয়েছিল
উপভোক্তা প্রয়াত শঙ্কর মাঝির নামে বরাদ্দ হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর ( Awas Yojana House )। কিন্তু কোথায় তাঁর পরিবার। অভিযোগ, সেই ঘরেই চলছে নীল-সাদা রঙের তৃণমূলের ‘উন্নয়ন ভবন’ ( TMC Party Office ) । একই উপভোক্তার নামে এলাকায় সেচ দফতরের বাঁধের জায়গায় একটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির দেওয়ালেও লেখা রয়েছে ’বাংলা আবাস যোজনা’ এবং উপভোক্তার নাম। এর তদন্তে নেমে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, সরকারি অনুদানে তৈরি দুটি বাড়ি নিয়েই বেআইনি কাজ হয়েছে।
জামালপুর ২ নম্বর ( Jamalpur) পঞ্চায়েত অফিসের কাছেই কাঠুবিয়াপাড়া গ্রাম। শঙ্কর মাঝি ছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে শঙ্কর মাঝির নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন হয়। যার আইডি নম্বর পিএমএওয়াই – ডাব্লু বি ১৬৮৫৩৩২। ঘর তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয় উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির নামে। সেই টাকায় পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর নিয়ম মেনে তার ’জিও ট্যাগিং’ হয়। অভিযোগ, এত কিছুর পরেও ওই বাড়িতে শঙ্কর মাঝি বা তাঁর পরিবারের কারও ঠাঁই হয়নি। সেটি হয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিলাসবহুল উন্নয়ন ভবন। জেলা ও ব্লক তৃণমূলের এক ঝাঁক নেতানেত্রী ওই পার্টি অফিসের উদ্ধোধন করেছিলেন। পরে এলইডি টিভি ও দামি আসবাবপত্রে সাজানো হয় সেই অফিস।
বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বিজেপি আন্দোলনে নামে। তারপরেই পার্টি অফিসটি ছেড়ে দেওয়া হয় উপভোক্তা শঙ্কর মাঝিকে। পঞ্চায়েত প্রধান মণিকা মুর্মু ও উপপ্রধান উদয় দাস ঘরের চাবি তুলে দেন শঙ্কর মাঝির হাতে। এমনকি তৃণমূলের উন্নয়ন ভবনটি যে আসলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকায় তৈরি উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির বাড়ি সেই কথাও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ওই উন্নয়ন ভবনের দেওয়ালে লিখে দেন। অভিযোগ, আন্দোলন দুর্বল হতেই উপভোক্তা শঙ্কর মাঝিকে উন্নয়ন ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর শঙ্কর মাঝি ও তাঁর পরিবারের ঠাঁই হয় গ্রাম থেকে খানিক দূরে সেচ দফতরের বাঁধের জায়গায়। বছরখানেক আগে মারা যান শঙ্কর।
তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা গোটা ঘটনার জন্য জামালপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেন। তিনি এও জানান, নিজের থেকে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি শঙ্কর মাঝির জন্য সেচ দফতরের বাঁধের জায়গায় ইটের দেওয়াল আর অ্যাসবেস্টাসের ছাউনি দেওয়া বাড়ি তৈরি করে দেন। ওই বাড়ির দেওয়ালে শঙ্কর মাঝির প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ও আইডি নম্বরও লিখে দেন বলে জানা গেছে।
তৃণমূলের মিছিল ঘিরে অশান্ত গাইঘাটা, ব্যবসায়ীর উপর হামলার পর থেকেই তেতে ছিল এলাকা
পঞ্চায়েত ভোটের আগে শঙ্কর মাঝির আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে সম্প্রতি নতুন করে বিতর্ক তৈরি হতেই তদন্তে নামে জামালপুর ব্লক প্রশাসন। সেই তদন্ত রিপোর্টে মেনে নেওয়া হয়েছে, শঙ্কর মাজির আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে পরপর দু’টি ‘ভুল’ হয়েছে। রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, খাঁপুর মৌজায় নির্মীয়মাণ বাড়িটিকেই প্রয়াত উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির বলে দেখানো হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বাড়ি তৈরির জন্যে তিনটি কিস্তিতে শঙ্কর টাকা তুলেছিলেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে সেখানেই তার ‘জিও ট্যাগিং’ও করা হয়েছিল। সে কারণে নীল-সাদা রঙের বাড়িটি প্রশাসনের খাতায় শঙ্কর মাঝির বলেই উল্লেখিত রয়েছে। সেই কারণেই ওই বাড়ির গায়ে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ লিখেছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত। আবার বাঁধের পাশে যে জমিতে সরকারি আবাস যোজনার বাড়িটি তৈরি হয় সেই জায়গাটি আদতে শঙ্কর মাঝিরই নয়। ফলে, ওই জায়গায় আবাস প্রকল্পের বাড়ি হলেও তা ‘বেআইনি’ ভাবেই হয়েছে।
এই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠেছে, উপভোক্তার নামে আবাস যোজনার রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাওয়া ও তারপর তিন কিস্তিতে সরকারি টাকা তুলে নেওয়ার পর বাড়িটা তৈরি হল কোথায়? দামোদরের ধারে সেচ দফতরের বাঁধের জায়গায় তো সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি তৈরি করা যায় না। নিজস্ব জমি দেখাতে না পারলে কেউ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার’ উপভোক্তা হিসেবে বাড়ি পেতে পারেন না। তাহলে পুরো টাকাটাই কি কেউ আত্মসাৎ করে নিয়েছে? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির নাতনি পূজা মাঝি সব শুনে মঙ্গলবার দাবি করেন, কাঠুরিরাপাড়া গ্রামের বাড়িটা তাঁর দাদুর না হলে তাহলে কেন দাদুকে ওই বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হয়েছিল? কেনই বা ওই বাড়িটার দেওয়ালে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ লিখে পঞ্চায়েত তাঁর দাদুর নাম লিখে দিয়েছিল। পরে আবার কেন ওই বাড়ির বদলে দামোদরের বাঁধের জায়গায় বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হল?”
বিজেপির যুব মোর্চার জামালপুরের আহ্বায়ক অজয় ডোকাল বলেন, “প্রকৃত উপভোক্তার ঘাড়ে বন্দুক রেখে সর্বত্রই সরকারি প্রকল্পের টাকা লুট করেছে তৃণমূল।” তবে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খান জানিয়েছেন, “তদন্ত রিপোর্টে কেউ দোষী হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট জেলায় জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা যেমন নির্দেশ দেবে, সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২৩/একে