এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩, ১২:০১ এএম
চীনের বিরুদ্ধে জাপান, আমেরিকা ও ব্রিটেনের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গতকাল তাদের জাপানি প্রতিপক্ষ হায়াশি ইউশিমাসা ও ইয়াসুকাজ হামাদার সাথে সাক্ষাত করেছেন। এই দুই দেশের কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তি সইয়ের খবর দিয়েছেন। তারা চীনকে আমেরিকা ও জাপানের কৌশলগত সহযোগিতার বিরুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন চীনকে ওয়াশিংটন ও টোকিওর জন্য বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এ মুহূর্তে আমেরিকা, জাপান ও তাদের মিত্ররা এ ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইউশিমাসা হাশায়া বলেছেন, চীন নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ওই দেশটি কেবল নিজেদের স্বার্থের কথাই ভাবে। আমরা চীনের এ আচরণের বিরোধী এবং তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি রক্ষার প্রতি সমর্থন জানাই।
এ ছাড়া পশ্চিমাদের চীন বিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা লণ্ডনে এক বৈঠকের পর সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি সই করেছেন। এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশই একে অপরের ভূখণ্ডে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারবে। লন্ডন এই চুক্তিকে গত শতাব্দীতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি বলে বর্ণনা করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ, উভয়ের সামনে বিরাজমান অভিন্ন হুমকির বিষয়টি উপলব্ধি করা এবং বিশ্বে আমাদের শক্তিশালী অবস্থানকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে যাতে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে লাগানো যায়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, টোকিও ও লন্ডনের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে, ব্রিটেন এখন জাপানের সাথে এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরকারী একমাত্র ইউরোপীয় দেশ হয়ে উঠেছে। এ কারণে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র নীতিতে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গুরুত্ব পাচ্ছে। কেননা এর ফলে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বাণিজ্য সম্পর্কও জোরদার হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে জাপানের সাথে ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা থেকে চীনের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের সমন্বিত ষড়যন্ত্র ও নানা পদক্ষেপের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। গত অক্টোবরে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে চীনকে আমেরিকার জন্য সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে চীন তার স্বার্থ এবং কর্তৃত্ববাদী নীতি অনুযায়ী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে তাইওয়ানের প্রতি চীনের বৈরী কর্মকাণ্ডকে অস্থিতিশীল এবং এই অঞ্চলে শান্তির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগেও বহুবার মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং রাজনীতিবিদরা চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন চীন আন্তর্জাতিক উদার নৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।
এ অবস্থায় চীনের প্রতিবেশী জাপানের সাথে আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টিকে বেইজিং ভালো চোখে দেখছে না এবং এটাকে তারা চীনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে।
খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২৩/একে