এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০৫:০২ পিএম
গুচ্ছ থেকে বের হতে চান জবি শিক্ষকরা
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আবারও নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরতে চান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা। ইতিমধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর এই দাবি জানানো হয়েছে৷ একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি অনুষদ থেকেও নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতির পক্ষে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
সমন্বয়হীনতা, ভর্তি কার্যক্রমে অধিক সময়ক্ষেপণ, মানসম্মত শিক্ষার্থী না পাওয়া সহ বেশ কিছু কারণে গুচ্ছ পদ্ধতি তার মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট না থাকাও আসন সহসায় পরিপূর্ণ না হবার অন্যতম কারণ মনে করছেন তারা। আর এসব কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার জৌলুস হারিয়েছে বলেও দাবি তাদের। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকবে নাকি বেরিয়ে যাবে সেটির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ একাডেমিক সভায়।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়বারের মত দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে অংশ নেয়। কিন্তু সার্বিক প্রক্রিয়া সহজতর করতে গিয়ে এবারও গ্যাড়াকলে পড়েছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যার ব্যতিক্রম নয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বার বার মেধাতালিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন পরিপূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেড় শতাধিক আসন ফাঁকা রেখেই প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে কর্তৃপক্ষ। ভর্তি কার্যক্রমে অধিক কালক্ষেপণের জন্য ফল প্রকাশের পর প্রায় ৬ মাস কেটে যায় ক্লাস শুরু করতেই। এতে দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সেশনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সময়ের দৌঁড়ে পিছিয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
আর ফাঁকা আসন পূরণে ন্যুনতম পাস নাম্বার পেয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেশনের (২০২১-২২) শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ শেষের দিকে। অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, দেশের সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে সর্বপ্রথম বিবিএ ও স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা লিখিত পদ্ধতিতে নেওয়া শুরু করে। সেসময় থেকে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে কর্তৃপক্ষ।
নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে প্রথম ধাপের প্রাথমিক আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী প্রাথমিক আবেদনকারীদের মধ্য হতে যোগ্যদের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায় ব্যপকভাবে।
পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় লিখিত ভর্তি পরীক্ষা প্রচলন করে। তবে পরপর দুই বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ব্যাপক সাড়া ফেললেও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সার্বিক ভোগান্তি হ্রাস ও সুবিধার্থে আয়োজনের কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে তার চিত্র ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। দ্বিতীয় বার গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এখনো ধুকছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, অতি অল্পসময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতটা এগিয়ে গিয়েছিল, দুইবার গুচ্ছে যাওয়ায় অনেকটা আবার পিছিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসংগতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বারবার গণ সাক্ষাৎকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোন মূল্যায়ন হয়নি। যারা নাম্বার পেয়েছে তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এভাবে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার প্রতিযোগিতা হয়না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়হীনতা,মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী না পাওয়া,ভর্তি কার্যক্রমে অনেক সময়ক্ষেপণ সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা গিয়েছে। এর সার্বিক প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরাও বিড়ম্বনায় পড়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছি এবছর থেকে আবারও নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতি আয়োজন করতে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম লুৎফর রহমান বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে যে মানের দরকার ছিল সেটা নেই। এর ফলে উল্টো শিক্ষার্থীরাই এক প্রকার হয়রানির স্বীকার হচ্ছে, সেশন জটও বাড়ছে। আমরা গতবারও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্ত সেই দাবিগুলো মানা হয়নি। এবছর আমরা আবারও দাবি জানিয়েছি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার জন্য। বুধবার বিশেষ একাডেমিক সভাতেই হয়ত এটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে৷
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট নেই। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েও যারা সিরিয়ালে পেছনের দিকে আছে তারা কলা অনুষদের বিষয় বরাদ্দ পাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে চায়না৷ ফলে তাদেরকে চাইলেই জোর করে ভর্তি করানো সম্ভব না৷
তিনি বলেন, যদি ঘ ইউনিট থাকে তাহলে সেখানে তারাই পরীক্ষা দিবে যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে চান৷ আর যারা বিজ্ঞানের বিষয় পড়তে চাইবে তারা বিজ্ঞানের নিজস্ব ইউনিটে পরীক্ষা দিবে। এর ফলে আসন পরিপূর্ণ হতে তেমন জটিলতা বা সময়ক্ষেপণ হবেনা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমরা এবছর গুচ্ছে থাকবো কিনা এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ২২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ একাডেমিক সভায় এটির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সবার মতামতের প্রেক্ষিতে।
এনবিএস/ওডে/সি