এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৮ মে, ২০২২, ০৩:০৫ পিএম
এপ্রিলে অ্যামাজনে বন উজাড়ের নতুন রেকর্ড
অ্যামাজনে বন উজাড়ের আবারো নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত মাসে ব্রাজিলের অ্যামাজন মহাবনে সর্বোচ্চ মাত্রায় বন উজাড়ের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যাটা আগের বছরের একই সময়ে উজাড় করা বনের তুলনায় দ্বিগুণ। এর আগে যেটা রেকর্ড সর্বোচ্চ ছিল। প্রাথমিকভাবে সরকারি ডাটায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এমন তথ্যে প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ প্রচারকরা।
ব্রাজিলের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইনপের তথ্য বলছে, এপ্রিলের প্রথম ২৯ দিনে এ অঞ্চলে মোট বন উজাড় করা হয়েছে ১ হাজার ১২ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার। চলতি বছরেই তৃতীয়বারের মতো বন উজাড়ের রেকর্ড হলো এপ্রিলে। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নতুন রেকর্ড দেখা গিয়েছিল।
ব্রাজিলের অ্যামাজনে বছরের প্রথম চার মাসের এ ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণও সর্বোচ্চ রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে উজাড় হয়েছে ১ হাজার ৯৫৪ বর্গকিলোমিটার বন। ২০২১ সালের তুলনায় যেটা বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। এবার যে পরিমাণ বন উজাড় হয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের আকারের তুলনায় দ্বিগুণ।
২০১৯ সালে ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অ্যামাজন উজাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। সে সময় থেকেই দুর্বল হয়েছে পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থাও। বলসোনারোর দাবি, অ্যামাজনে কৃষিকাজ ও খনন কার্যক্রম পরিচালনা করলে এ অঞ্চলের দারিদ্র্য দূর করা সহজ হবে।
ব্রাজিলিয়ান পরামর্শক দল ক্লাইমেট অবজারভেটরির প্রধান মার্শিও অ্যাস্ট্রিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের রেকর্ড তৈরি হওয়ার পেছনে একটি প্রথম ও শেষ নাম আছে। সেটি হলো জাইর মেসিয়াস বলসোনারো।
যদিও বলসোনারোর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে। দেশের পরিবেশ ও আইন মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, সরকার পরিবেশগত অপরাধ মোকাবেলায় বড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও পরিবেশগত কর্তৃপক্ষ পাঁচটি অ্যামাজন রাজ্যে বন উজাড় রোধ করতে সহায়তা করে যাচ্ছে। ব্রাজিলে বন উজাড় করার ঘটনা প্রতিনিয়ত এভাবে বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাইমেট অবজারভেটরি বলছে, এপ্রিলে এ ধরনের রেকর্ড দেখে তাদের বিশ্লেষকরা খুবই বিস্মিত হয়েছেন। কারণ এ সময়টা বৃষ্টির মৌসুম, ফলে কর্দমাক্ত বনে প্রবেশ করা কাঠুরেদের জন্য খুব কঠিন।
জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যয়কর অবস্থা রোধ করতে অ্যামাজন মহাবন রক্ষা করা খুব জরুরি। কারণ পরিবেশ উষ্ণ করার জন্য দায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইডের বেশির ভাগই শোষণ করে নেয় এ বন।
অ্যামাজন এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিএএম) সায়েন্স ডিরেক্টর অ্যানি অ্যালেন্সার বলেন, মনে হয় অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বন উজাড় বাড়তেই থাকবে। ঠিক যেমনটা আগের তিনটি নির্বাচনের বছরে হয়েছে। আবার ভোটারদের রাগান্বিত না করার বিষয়ে সতর্ক থাকার কারণে এ সময়ে কর্মকর্তারা আইন প্রয়োগ করেন কম। তবু গত মাসে বন উজাড়ের এ বৃদ্ধিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন তিনি।
অ্যালেন্সার বলেন, মনে হচ্ছে বন উজাড় করার বিষয়টা প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে গেছে। আর সেটা এ দেশে একদম সাধারণ একটা ঘটনা হয়ে গেছে। তাতেই রেকর্ডের পর রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।