যে কারণে বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভরশীলতার অর্থনীতি। বৈদেশিক সাহায্যের ওপর অর্থনীতি নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতা আসার সাথে সাথে তিনি তার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেন। ভিশন-২০২১ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। তিনি অর্থনীতিকে কোথায় নিতে চানÑ সেই লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করলেন। তখন অনেকেই বলেছিলেন, অবিশ্বাস্য লক্ষমাত্রা। কিন্তু আমরা দেখলাম এমডিজির (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) লক্ষ্যমাত্রায় সফলতার সাথে পৌঁছতে পেরেছি এবং তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা অর্জন করতে পেরেছি।
বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশ এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা সফলতায় অর্জন করতে পেরেছে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরে বিশ্ববাসীর কাছে মিরাক্কেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছি। এই অর্জনগুলো তার নেতৃত্বে হয়েছে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দূরদর্শিতা। অর্থনীতি নিয়ে সিদ্বান্ত নেওয়া ক্ষমতা খুবই কম লোকেরই আছে। সেখানে শেখ হাসিনা সফলতার সাথে নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষমতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীও একজন ডায়নামিক মানুষ ছিলেন এবং তার সাথে অর্থনীতিতে একটা ভালো টিম ছিলো, যা আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিক চিন্তা ভাবনার ফলে ভিশন-২০২১ মাঝামাঝি সময়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেন, ভিশন-২০৪১ আমরা কোথায় পৌঁছাতে চাই।
এখন সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো-আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ। এই জন্মদিনটা এমন এক দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসডিজিতে পুরস্কার অর্জন করেছেন। এই পুরস্কারটা আর্ন্তজাতিক সম্পদ্রায় থেকে শেখ হাসিনার জন্য বড় পুরস্কার। কারণ এটা শুধু শেখ হাসিনার জন্যই গর্বের নয়, পুরো জাতির জন্যও গর্ব ও অহংকার। এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করা জন্য বিশ্ববাসী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আগে আগেই পুরস্কত করেছেন।
এর মধ্যে এসডিজির (সাসটেইনেবেল ডেভেলপমেন্ট গোল) যেটা হয়েছে। এসডিজির সফলতার কারণে গত দুই একদিন আগে তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শুধু স্বীকৃতিই নয়, বাংলাদেশে আর এখন আর সেই জায়গা নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়ন অনেক উর্ধ্বে চলে যেতে শুরু করেছে। তিনি বাংলাদেশের অসহায়, দরিদ্র ও ঘরহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। আগে ঘরহীন মানুষ রাস্তায় জীবনযাপন করতেন এবং বেদেরা নৌকায় ঘুরে বেড়াতো। এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে তাদের জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। তাছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শুধু বাড়ি ঘর নয়, বেঁচে থাকার জন্য তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে সরকার।
বাংলাদেশে এমনিতে ডেভেলপমেন্টর দেশ। বাংলাদেশ এখন ‘স্যোশাল সেফটি নেট’ দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে বড় ধরনের দৃষ্টান্ত। দেশের ২২ শতাংশ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে এসেছে সরকার। এই যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করেছে। এটাকে এখন আরও পরিধি বাড়িয়ে ২৪টি ধরনে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর বয়স হচ্ছে। কিন্তু তার নেতৃত্বের বিকল্প নয়। তবুও দেশে ইয়াং লিডারশিপ টিম দরকার। তিনি এখন যে কাজগুলো করেন সবগুলো দক্ষ টিমের মাধ্যমে করেন। দক্ষ টিম থাকলেও তাদের নেতৃত্বের জন্য একজন ভালো দক্ষ লিডার প্রয়োজন। তিনি সেই জন্য নতুন প্রজন্ম থেকে অনেক নতুন মানুষকে পরিচয় করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় যারা পুরনো নেতা-কর্মী টিমের সাথে যুক্ত আছেন তাদের তো বাদ দেওয়া যায় না। এটার সবার মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে। আমি বিশ্বাস করি, নেত্রী এই সকল বিষয় নিয়ে ভাবছেন।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকতা খুবই প্রয়োজন। এখন সবকিছু নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকাতে বা সচিবালয়ে না আসলে বা প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে না গেলে কোনো কিছু সমাধান হয় না। এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। প্রয়োজন নেতৃত্বের মধ্যে কাঠামো গত পরিবর্তন আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া জেলা সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে আনতে হবে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ দেশে ডেভেলপমেন্টের পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের দেশে উন্নয়ন যখন হয় তখন বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নয়নের বাধা হয় এমন উপসর্গ থাকলে তা দূর করতে হবে। আমি বলবো না বিকল্প নেতৃত্ব। আমি বলবো তার পরিবর্তিত দিনে যুবকরা এবং অন্যান্য দলের ও পুরাতন নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পৃকতা রেখে একটা টিম গঠন করতে হবে। দেশে রাজনৈতিক সম্পকৃতা বাড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে এখনই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। আমরা সবাই জানি নির্বাচন আগামী দুই বছর পর। কিন্তু তারা এখনো নির্বাচন নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। এটা একটা শুভ লক্ষণ। এটা একটা কালেক্টিভ লিডারশিপের অংশ। লং টাইম প্ল্যানিং করে নির্বাচনী বিজয় অর্জনের লক্ষ্যটা কিন্তু ভালো লক্ষণ। নতুন যে নির্বাচন আসবে, তাতে পরিষ্কার নির্দেশনা থাকবে। যাতে করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকতা থেকে বের হওয়া যায়। কীভাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও লিডারশিপ থ্রি তৈরি করা যায়Ñ তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের এখন ফাউন্ডেশন আছে। কিন্তু আমাদের লিডারশিপের শাখা-প্রশাখা এবং বড় শাখা, ছোট শাখা আরো বেশি লিড করতে হবে। এটা সময়ের দাবি। আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা এই বিষয়গুলো আরো নিবিরভাবে দেখছেন বা দেখবেন।
সব মিলিয়ে নতুন অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। এই যাত্রাকে ধরে রাখার জন্য শেখ হাসিনার জন্য সবাই দোয়া করতে হবে এবং আমি দোয়া করি। জাতির কাছে আহ্বান করছি সবাই মাননীয় প্রধামন্ত্রীর জন্য দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে হায়াত বৃদ্ধি করেন। বেঁচে থাকুক দীর্ঘদিন। আমাদের সকলের এই প্রত্যাশা, তিনি যেন দেশের জন্য আরো অবদান রাখতে পারেন। এই প্রত্যাশাকে আরো জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। তার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা এবং সুস্বাস্থের কামনা করছি এবং তার কর্মময় জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে তার জন্য শুভ কামনা করছি।
আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। আমরা তুলনা করতে পারছি পাকিস্তানিদের সাথে। একসময় পাকিস্তানিরা আমাদের শোষণ ও নিপীড়ন করেছিলো। তাদের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি আমরা। আমি একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসেব বলছি, এখন বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানি পার্লামেন্টও গর্ব বোধ করে। তারা পার্লামেন্টে বলে, ‘পাকিস্তানকে সুইজারল্যান্ড বানানোর প্রয়োজন নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতির উর্ধ্বগতির মতো হলো হবে’। ভারতও আমাদের থেকে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, এশিয়া অঞ্চলে আমরা হচ্ছি ওয়ান অফ দ্য লিডিং ইর্মাজিং টাইগার। যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকতেন, তাহলে উন্নয়নের এই গল্প তৈরি হতো কিনা সন্দেহ! পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক।