বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় তীব্র সুপেয় পানির সংকটে পড়ছে প্রায় ১০ গ্রামের শত শত মানুষ। বাবুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ‘‘অমৃত লাল দে কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরি নামের একটি কোম্পানি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বোতলজাত করে বরিশালসহ সারাদেশে পানি বাজারজাত করায় তীব্র সুপেয় পানির সংকটে পড়ছেন স্থানীয় বাসীন্দারা। পানি ব্যবসার আড়ালে ভূগর্ভস্থ পানি পানি খেকোতে রুপ নিচ্ছে অমৃত গ্রুপ। এক সময়ের সুপেয় পানিতে ভরা হিজলা, ছাতিয়া, রহমতপুর, মেথিয়া, চাঁদপাশা, ক্যাডেট কলেজ, মাধবপাশা, পাংশা, গড়িয়ার পাড়সহ ১০টি গ্রাম এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলের গ্রামবাসীরা সুপেয় পানির সংকটে যেন বন্দি হয়ে আছে অমৃত গ্রুপের কাছে। এত সংকট থাকা সত্বেও অমৃত গ্রুপ তাদের মতো করে বড় বড় পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থের পানি উত্তোলন করে বাজারজাত করছে। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে তাদের এমন ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলন। স্থানীয় বাসিন্দাদের এমন দুর্ভোগে ফেলে তাদের পানি ব্যবসা চলছে রমরমা।
এ বিষয়ে গত ২১ এপ্রিল বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়। অভিযোগটি করেন ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা ও আইনজীবী এম. মাসুদ হাওলাদার । অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে , ‘‘অমৃত লাল দে কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট কোম্পানি বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে নদী বা সমুদ্রের পানি রিফাইন না করে ভূগর্ভস্থ পানীয় জল অবৈধভাবে উত্তোলন করে বরিশালসহ দেশের সর্বত্র বাজারজাত করছে। যার ফলে পার্শ্ববর্তী হিজলা, ছাতিয়া, রহমতপুর, মেথিয়া, চাঁদপাশা, ক্যাডেট কলেজ, মাধবপাশা, পাংশা, গড়িয়ার পাড়সহ আশেপাশের এলাকার তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গভীর নলকূপে প্রায় সময়েই পানি থাকে না, মাঝে মাঝে ভোর রাতে দিকে কিছুটা পানি পাওয়া যায়।
উক্ত অভিযোগ দায়ের করা হলেও এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, এতে করে ওই অঞ্চলের মানুষের মাঝে দেখা দিচ্ছে তীব্র ক্ষোব। সুপেয় পানি না পেয়ে সাধারণ জনগণ সর্বত্র দুষছেন অমৃত লাল কোম্পানিকে। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত জনগণকে উত্তোলন করতে না পারলে ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তারা সতর্ক করে আরো বলেন, উক্ত পরিস্থিতির সমাধানে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আইনের যথাযত প্রোয়োগ জরুরি। এতে তারা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্যাকেটজাত পানির প্রস্তুতকারক ‘ অমৃত গ্রুপের. কারণে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার শত শত বসতবাড়ির টিউবওয়েল ও মর্টার লাইনে তীব্র পানির সংকট। রাত গভীর হলে কিছু পানি উত্তোলন করা সম্ভব হলেও দিনে পানির খড়া এতটাই তীব্র হয় যাতে আশে পাশের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের জীবন এখন বিপন্ন। একাধিক বাসিন্দা বলেন- এমন ভূগর্ভস্থের পানি উঠিয়ে বাজারজাত করলে সাধারণ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হবেন স্বাভাবিকভাবেই। অথচ ৫ কিলোমিটার দূরে নদী থাকলেও সেখান থেকে পানি উত্তোলন ও রিফাইন করে বাজারজাত করলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, মাধবপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফাতেমা আক্তার লিপি বলেন, এক বছর আগেও এমন ভূগর্ভস্থ পানির কোন সমস্যা অত্রাঞ্চলে ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মিজান বলেন, আমরা অমৃত লাল দের প্রতিষ্ঠানটির কারণে গত এক বছর ধরে গভীর নলকূপে পানি পাচ্ছি না। তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে অমৃত নামে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করছে। এতে মাধবপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানির তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে এলাকাবাসীর এমন দুর্ভোগ আরো চরম আকাড় ধারণ করবে।
এ বিষয় জানতে চাইলে, অমৃত লাল দে কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরির ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার জয়দে বলেন, “বর্তমানে আমাদের ফ্যাক্টরির আশেপাশে জনবসতির ঘনত্ব অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিবছর এই সময়টাতে এ অঞ্চলের টিউবওয়েলগুলোতে পানি তুলনামূলকভাবে কম উঠে। অন্যদিকে, আশপাশের অধিকাংশ পুকুর, ডোবা ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এর অন্যতম কারণ।” তবে সরে জমিন পরিদর্শন করে তার এমন বক্তব্যের সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অত্র অঞ্চলে তেমন নতুন বাড়ি ঘরের দেখা এবং জলাশয় বিলুপ্তের চিত্র চোখে পড়েনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিয়মিত পানি উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়গুলো মনিটার করি। এই অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এনবিএস/১২-৫/এসএইচ/এমএ/এএম


