আজ রাজধানী ঢাকায় এক বিশেষ সম্মেলনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতির প্রভাবে দেশের পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।  

আজ ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান।  

অধ্যাপক সোবহান বলেন, বাজার অর্থনীতির কারণে জমির মূল্য বাড়ার পাশাপাশি নদ-নদী, জলাভূমি, বনভূমি দখল করে আবাসন নির্মাণের ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া কালোটাকার প্রভাবও পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে অন্যতম একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সরে আসা প্রয়োজন, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলেও আশাবাদী, তবে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিশেষত, পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দ্রুত কমিশন গঠন করতে হবে।  

এ সময়, সম্মেলনের সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছরের পথচলায় বাপার অনেক অর্জন থাকলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশ আন্দোলন এখনও কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকার জনগণ নিজেদের পরিবেশ সমস্যাগুলো নিয়ে আন্দোলন করছে, কিন্তু তাদের সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।  

এছাড়া, বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ে বাপা ও বেন-এর গ্রন্থাবলী গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করছে। তবে, তারা এখনও স্ব-অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।  

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে ‘রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাপা ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম’, দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’, এবং তৃতীয় অধিবেশনে ‘বায়ু, শব্দ, ও দৃষ্টিদূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আলোচনা হয়।  

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আরও আলোচনা হবে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ন’, ‘জ্বালানী, বিদ্যুৎ, ও জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ‘বন, পাহাড়, উপকূল, ও আদিবাসী অধিকার’ নিয়ে।  

সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  

এদিকে, দেশি-বিদেশী পরিবেশ বিজ্ঞানী ও গবেষকরা তাঁদের মূল্যবান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা পরিবেশ সুরক্ষায় তাঁদের মতামত তুলে ধরেছেন।  


এ ধরনের সম্মেলন পরিবেশ সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নীতিগত পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা আশা করি, দেশের পরিবেশের উন্নতির জন্য সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।  

news