বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে প্রায় চার লাখ মানুষ এই কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধিত হলেও, বর্তমানে নিবন্ধনের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। বিশেষত, নতুন নিবন্ধনকারীদের সংখ্যা গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং অনেকেই তাদের কিস্তি জমা দিতে আগ্রহী নন। 

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যে পেনশন কর্মসূচি নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে। এই কম আগ্রহের মূল কারণ হিসেবে প্রচারণার অভাব এবং কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তুলে ধরা হচ্ছে। অনেক নিবন্ধিত গ্রাহকই কিস্তির টাকা জমা দিচ্ছেন না এবং কিছু সদস্য এমনটাও জানাচ্ছেন যে, পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিয়মিত তথ্য ও নির্দেশনা পাওয়ার অভাব রয়েছে। এক প্রভাষক, যিনি এই স্কিমের আওতায় নিবন্ধন করেছিলেন, তিনি বলেন, "নিবন্ধনের পর আমাদের কাছে সেরকম কোনো নির্দেশনা আসেনি এবং কোনো ধরনের অনুস্মারকও ছিল না।"

কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যে, এই পেনশন স্কিম বাতিল করা হবে না, বরং তা আরও আকর্ষণীয় এবং সুবিধাজনক করা হবে। সরকারের পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং জনগণের আগ্রহ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচারণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা একাধিক বিভাগীয় পর্যায়ে মেলার আয়োজন করছে এবং আগামী মাসে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

অন্যদিকে, ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন, এই পেনশন স্কিমের মূল সমস্যা হচ্ছে এর ব্যবস্থাপনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। তিনি বলেন, "গ্রাহকরা নিশ্চয়তা পাচ্ছে না যে, তাদের টাকা সময়মতো ফেরত পাবে কিনা, এবং ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে চলবে কি না।" এমনকি, পেনশন কর্তৃপক্ষও মেনে নিয়েছে যে, এই কর্মসূচির ভবিষ্যত নির্ভর করছে সরকারের আর্থিক এবং প্রশাসনিক পরিকল্পনার ওপর। 

তবে, পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন যে, এই স্কিমের আস্থাশীলতা বজায় রাখার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং গ্রাহকরা তাঁদের টাকা সময়মতো পাবেন। 

এছাড়া, তারা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্তির সুবিধাগুলোর মধ্যে নানা ধরনের বীমা সুবিধা যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যাতে জনগণের কাছে এটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক প্রচারণামূলক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে সারা দেশে আরও মানুষ পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে এবং এর সুফল ভোগ করতে পারে।

পেনশন কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩.৭৩ লাখ মানুষ এই কর্মসূচিতে নিবন্ধন করেছেন এবং এর মধ্যে প্রায় ১৫৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু সরকার পতনের পর নিবন্ধনের গতি কমে গেছে, যা প্রধানত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ঘটেছে। সিলেটসহ অন্যান্য অঞ্চলে পেনশন কর্তৃপক্ষ আরও প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। 

এছাড়া, কিছু অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন যে, সঞ্চয়পত্রের তুলনায় পেনশন স্কিমে আর্থিক মুনাফা একটু বেশি হওয়া উচিত এবং তার জন্য দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। অর্থাৎ, পেনশন স্কিমের ভবিষ্যত নির্ভর করছে এর কার্যকরী ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের আস্থার ওপর। 

সর্বশেষে, পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা আশ্বস্ত করেছেন যে, এই স্কিম দেশের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি সফল করতে সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

news