সংকট আছে, সমাধান নেই

টাঙ্গাইলের রাজ্য সিনে কমপ্লেক্সের কর্ণধার রাজ্য জানালেন, তিনি এ সপ্তাহে কোনো ছবি প্রদর্শন করছেন না। কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, সিনেমা হল মালিক হিসেবে যে অর্থ প্রতি সপ্তাহে বিনিয়োগ হয় দর্শকের অভাবে তা উঠে আসে না। তিনি বলেন, ‘হলটি চালু করার পর কয়েক মাসে আমার লোকসান হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এরপর প্রিয়তমা ও সুড়ঙ্গ ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে সেই লোকসান আমি পুষিয়ে নিয়েছি।’

কথা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, অনেক ছবির মালিককেই বলেছি, আমাকে শুধু সাপ্তাহিক খরচের টাকাটা দিয়ে তাদের ছবি প্রদর্শন করে পুরো টাকাটাই তারা নিয়ে নেন। কিন্তু কেউ রাজী হন না। হল মালিক হিসেবে আমিই কেবল লোকসান দিয়ে যাব, তার অংশীদার হতে ছবির মালিকও রাজী নয়। এক্ষেত্রে অবশ্য তাদেরও যুক্তি আছে। তারা অর্থ লগ্নী করেই ছবিটি নির্মাণ করেছেন। লোকসানের ভাগ কত টানবেন। 

তিনি বলেন, অনেকে বলে থাকেন আমাদের দেশে সিনেমা দেখার দর্শক কমে গেছে। আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। কারণ তাহলে সুড়ঙ্গ বা প্রিয়তমা কারা দেখলো। আমাদের দেশের মানুষ সিনেমা দেখতে চায়। আবারও বলি তারা সিনেমাই দেখতে চায়। সিনেমাকে তো সিনেমা হতে হবে। আপনি টেলিফিল্ম নির্মাণ করে বলবেন এটাই সিনেমা, সেটাতো দর্শক মেনে নেবে না। ছবিতে গল্প থাকতে হবে। দর্শক পছন্দ ও উপভোগের উপকরণ থাকতে হবে তাহলেই দর্শক সে ছবি দেখবে। দেখার মতো ছবি হলে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মানুষ সিনেমা দেখতে আসেন। 

রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেল, চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলে নির্মাতা লাগবে। এদেশে যারা নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন তাদের হাতে ছবি নেই। এফডিসির পরিচালক সমিতিতে আড্ডা দিয়ে অনেকেই সময় পার করেন। জীবন ও জগত সম্পর্কে তারা উদাসীন। তাদের বেশির ভাগেরই আগ্রহ মুখরোচক আলোচনায় মেতে থাকা। রাজ্য বলেন, ‘পুরনো অভিজ্ঞ নির্মাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। নইলে মূমুর্ষূ চলচ্চিত্রশিল্পকে কিছুতেই বাঁচানো যাবে না।’ 

চলচ্চিত্র বাজারজাত করার অন্যতম স্তম্ভ প্রচার নিয়েও কথা বলেন তিনি। ছবি মুক্তির দুই থেকে তিনদিন আগে নির্মাতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে গণমাধ্যমকর্মীরা সঠিকভাবে ছবিটির প্রচারও করতে পারেন না। চলচ্চিত্র কোনো কোম্পানির তৈরি পণ্য সামগ্রী নয়। যাকে ভোক্তা-গ্রাহকরা ব্যবহার করে গুণাগুণ বিচার করবেন। চলচ্চিত্র হলো শো-বিজনেস। এর নির্মাণ পর্যায় থেকেই আলোচনার সূত্রপাত হবে এবং সর্বক্ষণ আলোচনায় থাকতে হবে। কিন্তু এখন সেটা হয়না। কবে, কখন, কোথায়, কোন ছবি নির্মিত হলো বা কোথায় মুক্তি পেল সে খবরও কেউ পান না। এভাবে ক্রমশ চলচ্চিত্র ব্যবসায় নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। 

রাজ্য বলেন, ছবি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রোজেক্টরও একটা সমস্যা। আমরা যে প্রোজেক্টর দিয়ে ছবি প্রদর্শন করি, সেটা অনেকটাই খোলা বাজারে টকি বায়াস্কোপ প্রদর্শনের মতো। দর্শক সিনেমা দেখছেন, সেটাও তাদের অনুভব করানো যায় না। দর্শক যদি সিনেমা দেখার আনন্দ উপভোগ করতে না পারেন, তাহলে তারা গাটের টাকা খরচ করে কেন সিনেমা দেখতে আসবেন?

news