গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’, চলচ্চিত্রশিল্পে সেন্সরশিপ বাতিলের দাবি
নানা রকম বিধিনিষেধের বেড়াজালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প বারবার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। একজনের কাজের সেন্সর হলে আরেকজনের মনেও সেই ভয় ঢুকে যায়। অন্যজনও তখন নিজের অজান্তে তার স্ক্রিপ্ট, দৃশ্যায়ন সবকিছুতে সেন্সর করতে শুরু করেন।
এমন করে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিল্পমাধ্যম। তাই সার্টিফিকেশন অ্যাক্ট ২০১৯-এর আরও বেশি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা দরকার। আইনে উল্লিখিত অনুভূতিতে আঘাত বা সম্মান ক্ষুণ্ম হওয়ার মতো শব্দগুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ফ্যাব ফেস্টে ‘বাংলাদেশি সিনেমা অ্যাট আ ক্রস রোড: হাউ রিফর্ম ক্যান প্রোপেল আস’ পর্বে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে এসব সংকটের কথা।
শুক্রবার সকাল থেকে ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘ফ্যাব ফেস্ট ২০২২’। বাংলাদেশি সিনেমা ‘অ্যাট আ ক্রস রোড: হাউ রিফর্ম ক্যান প্রোপেল আস’ পর্বের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক নূর সাফা জুলহাজ। প্রথম পর্বের স্বাগত বক্তব্য দেন চলচ্চিত্রকার ও নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তিনি বলেন, এই শিল্পে নেতৃত্বের ব্যর্থতা অতীতেও ছিল, এখনো আছে। একসময় এ দেশে শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ ছিল, কিন্তু এখন তা অর্ধশততে নেমে এসেছে।
ঐতিহ্যের আলোকে ভবিষ্যতের সোপান তৈরির চেষ্টা থেকেই এ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘আমরা গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ দাবি নিয়ে শুরু হয় আয়োজনের প্রথম পর্বের আলোচনা। এই শত বছরের পুরোনো ব্রিটিশ কলোনিয়াল আইনের ধারাবাহিকতায় তৈরি সার্টিফিকেশন অ্যাক্টের ইতিহাস তুলে ধরেন চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন।
কামার আহমেদ সাইমন বলেন, যে সমাজে প্রশ্ন তোলা যায় না, সেই সমাজ মজাপুকুরের মতো। সেখানে নতুন কিছু উদ্ভাবন হওয়ার পথ সংকীর্ণ হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তৈরি করা নির্মাতাদের কাঁটাতারের বেড়ার পেছনে বসা এরই এক বার্তা। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি বললেন, রিফর্ম আসতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। আইনপ্রণেতাদের দুই পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনের কাঠামো অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে কি না সে বিষয়ে পারস্পরিক আলাপের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে ।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এখন আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখে কেউ বলিউড বা কলকাতার সিনেমার কপি বলতে পারবেন না। বারবার ভাবমূর্তি নষ্ট করার যে অভিযোগ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আনা হয়, সে কথা তুলে ধরে জানান, ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হলে কষ্ট করে শিল্প তৈরির প্রয়োজন হয় না। সেন্সরের ধারাগুলো যথেষ্ট নির্দিষ্ট নয় উল্লেখ করে অনুদানের নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। সরকারি অনুদানে বানানো ছবির জন্য তরুণদেরও সমান সুযোগ পাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন।
এনবিএস/ওডে/সি