দিল্লির কঠোর হতেই বাড়তি নিরাপত্তা ফিরল ব্রিটেনে ভারতীয় দূতাবাসে
দিল্লিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন অফিস (Indian High Commission) এবং ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতের বাড়ির সামনে থেকে বুধবার বাড়তি নিরাপত্তা তুলে নিয়েছিল পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসে ফিরল বাড়তি নিরাপত্তা। বুধবার বিকালে লন্ডন পুলিশ ভারতীয় দূতাবাস ভারত ভবনের চারপাশে বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করেছে।
দূতাবাসের নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতির এমন নজির সাম্প্রতিক সময়ে নেই। ব্রিটেন ও ভারতের মধ্যে তো নয়ই। এবার দিল্লি পুলিশও রাজধানীকে ব্রিটিশ দূতাবাসের নিরাপত্তা ফের বাড়িয়ে দেয় কিনা সেটাই দেখার। তবে ভারত সরকারের মনোভাব লন্ডন পুলিশ ও ব্রিটিশ সরকারের কাছে স্পষ্ট করা গেছে, মনে করছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক।
দু দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিবাদের সূচনা হয়েছিল গত রবিবার। লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে সেদিন হামলা চালায় সে দেশে বসবাসকারী খলিস্তান (Khalistan) সমর্থকেরা। ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। খলিস্তানি পতাকা তোলার চেষ্টা হয় দূতাবাস ভবনে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার দিল্লিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং শিখদের কয়েকটি সংগঠন। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে হাইকমিশন অফিস এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাড়ির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। সিমেন্টের ব্লক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাস এবং দূতের বাড়ি। মোতায়েন হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশও।
বুধবার দিল্লি পুলিশ সিমেন্টের ব্লক সরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়। যথারীতি দিল্লি পুলিশের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে কূটনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিরাপত্তা নয়, পুরোদস্তুর কূটনীতি জড়িত। তাছাড়া বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয় না। সরকারের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করে।
কেন সিমেন্টের ব্লক সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে কূটনীতির চাল দেখছে ওয়াকিবহাল মহল? রবিবার লন্ডনের ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকারের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত। দিল্লিতে ব্রিটেনের উপ হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রকে ডেকে ভারতের ক্ষোভের কথা জানিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় কেন খলিস্তানীদের বিক্ষোভের বিষয়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা অন্ধকারে ছিলেন। কেনই বা দ্রুত খলিস্তানিদের সরিয়ে দেয়নি ব্রিটিশ পুলিশ।
ভারত সরকারের আরও প্রশ্ন, বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে ঢুকে জাতীয় পতাকা সরানোর সুযোগ কী করে পেল। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দিল্লির পররাষ্ট্রমন্ত্রক নিশ্চিত ব্রিটিশ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটতে পেরেছে। বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তাকে লঘু করে দেখার প্রতিবাদে ভারত কড়া বার্তা দিয়েছে সে দেশের সরকারকে।
সোম ও মঙ্গলবার দিল্লির ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনে লন্ডনের ঘটনার প্রতিবাদের পাশাপাশি খলিস্তান বিরোধী বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ শুরুর আগেই দিল্লি পুলিশ সেখানে ব্রিটিশ হাইকমিশন এবং হাইকমিশনারের বাড়ির নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল। সিমেন্টের ব্লক সরিয়ে বিক্ষোভকারীদের এগনোর উপায় ছিল না।
কিন্তু ভারত সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তোলে লন্ডন পুলিশের সিদ্ধান্ত। রবিবারের ঘটনার রেশ না কাটা সত্ত্বেও লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেয় তারা। রবিবারের ঘটনার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল।
কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছে নিরাপত্তা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার ও লন্ডন পুলিশকে বার্তা দিতেই নয়া দিল্লি রাজধানীতে ব্রিটেনের দূতাবাসের অতিরিক্ত নিরাপত্তা বুধবার প্রত্যাহার করে নেয়। এই ব্যাপারে দিল্লির ব্রিটিশ দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। দিল্লি পুলিশও এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, দিল্লি পুলিশের সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের বাড়তি নিরাপত্তা বহাল করে সে দেশের সরকার। ভারতীয় দূতাবাসে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। পররাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করছে, দিল্লি পুলিশের সিদ্ধান্তের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্রিটিশ সরকার ও লন্ডন পুলিশ উপলব্ধি করেছে।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২৩ /একে


