সামাজিক সংকটের মধ্যভাগে ভারত, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রভাব ফেলছে অর্থনীতিতে: অভিজিৎ বিনায়ক

 ভারতের বর্তমান সামাজিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (Avijit Vinayak Banerjee)। একটি বেসরকারি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা (পড়ুন ভারত) সামাজিক সংকটের মধ্যভাগে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এখনই উচিত লাগাম টানা।”

অনেকের মতে, অভিজিৎ (Avijit Vinayak Banerjee) আসলে এই কথাগুলি বলতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ কোভিডের গোড়াতেই বলেছিলেন, ভারতে অধিকাংশ মানুষ যে অর্থনৈতিক স্তরে বিরাজ করেন তাঁদের হাতে নগদ টাকা না দিলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে না। বাজারকে যদি ঘুরে দাঁড় করাতে হয় তাহলে গরিব মানুষের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে হবে।

সেই সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তথা বিজেপি ঘেঁষা অর্থনীতিবিদরা অভিজিৎকে কটাক্ষ করেছিলেন এই বলে যে, তিনি ইউটোপিয়ান জগতে বসবাস করছেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্যের প্রয়োজন তা কেন্দ্রীয় সরকার সব মানুষের জন্য সুনিশ্চিত করেছে। আবার অভিজিতের পক্ষে দাঁড়িয়ে একাংশের অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যে কথা বলছেন তা ভবিষ্যৎ ভারতের কথা ভেবে বলছেন, বাজারের পঙ্গুদশা কাটাতে তা সাহায্য করবে।

এখন যখন টাকার দাম পড়ছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে তখন ‘ভারত সংকটের মধ্যভাগে’ বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।

ওই সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এও প্রশ্ন করা হয়, সামাজিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কি সামগ্রিক ভাবে এই সংকটকে আরও গভীর করছে? এর কি কোনও প্রভাব রয়েছে? একবাক্যে মেনে নিয়ে অভিজিৎ বিনায়ক বলেছেন, “সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অর্থনীতিকেও অস্থির করছে। সামগ্রিক ভাবে তার একটা প্রভাব তো রয়েছেই।”

তিনি এও বলেছেন, এই অস্থিরতার জন্য পশ্চিমী বিনিয়োগকে ভারত টানতে পারছে না। কারণ, বিনিয়োগকারীরা সুস্থির পরিবেশ পছন্দ করেন। যেখানে তাঁদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে। তবে সাক্ষাৎকারে আশার কথাও শুনিয়েছেন অভিজিৎ বিনায়ক। তিনি বলেছেন, অনেক বড় দেশ রয়েছে যারা স্থিতিশীল জায়গায় নেই। ভারত যদি সঠিক দিশায় পথ চলতে পারে তাহলে একটা স্থিতিশীল জায়গায় পৌঁছবে। তিনি এও বলেন, অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড কোভিডের কারণে কার্যত দুমড়ে গিয়েছে। ফলে ভারত এখন অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনীততে মাথা তোলার ব্যাপারে।

তবে অভিজিৎ স্পষ্ট বোঝাতে চেয়েছেন, তার আগে চলতি উন্মাদনা বন্ধ করতে হবে। এক শ্রেণির উগ্র ডানপন্থীকে যে ভাবে খোলা বাজারে ছেড়ে রাখা হয়েছে, তাদের উপর রাশ টানতে হবে। নইলে স্থিতাবস্থা তৈরি হবে না। সেই আন্দোলিত সমাজ কখনওই সমৃদ্ধি ও বৃদ্ধির সহায়ক হবে না।খরব দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news