সনিয়া, রাহুলকে ইডি নোটিস কি মোদীর অঙ্ক, লাভ দেখছে কংগ্রেসও, কীভাবে

এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী এবং প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী (Sonia-Rahul) এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে হাজিরা এড়াবেন না। সনিয়াকে তলব করা হয়েছে ৮ জুন। ৫ জুন হাজির হতে বলা হয়েছে রাহুল গান্ধীকে।

কংগ্রেস সূত্রে খবর, রাহুল (Sonia-Rahul) বিদেশে আছেন। ৫ তারিখের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবেন কিনা আজ বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী সে কথা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়ে দেবেন। ৫ তারিখের মধ্যে ফিরতে না পারলে দেশে ফিরেই যাবেন ইডি দফতরে।

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সনিয়া ও রাহুলকে তলব করেছে ইডি। বুধবার দুপুরে কংগ্রেস এই নোটিসের কথা প্রকাশ্যে জানানোর পর থেকে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে, নোটিস দেওয়ার সময়কে ঘিরে। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর করা ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলাটি বেশ পুরনো। তাঁর অভিযোগ ছিল, সম্পত্তির হাতবদলে লাভবান হয়েছেন সনিয়া রাহুল। ২০১৫ সালে মামলাটি প্রথমবার গুটিয়ে নেয় ইডি। কিন্তু বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে নতুন করে তদন্ত শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে।


সেই মামলায় এতদিন পর হঠাৎ করে গান্ধী পরিবারের দুই শীর্ষ সদস্য তথা কংগ্রেসের প্রধান দুই কাণ্ডারিকে নোটিস ধরানোর সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনীতির নানা অংক মিলিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।

বিজেপির অঙ্ক

আগামী মাসে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিজেপি নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট যদিও খাতায়-কলমে তাদের ঝুলিতে এখনও নেই। তবে এ মাসের ১০ তারিখ রাজ্যসভার ৫৭টি আসনে নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিজেপির ভোটের ঘাটতি অনেকটাই কমবে। শুধু উত্তরপ্রদেশ থেকেই তারা ১১টি আসন পাবে। আর সাংসদ পিছু ভোটের মূল্য ওই রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও, অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং বিজু জনতা দলের সমর্থন তারা আগের বারের মতো এবারও পাবে বলে আশাবাদী।

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব শুধু জয় পরাজয়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে দেখছে না। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা চাইছেন, বিরোধীরা যেন আগের বারের মতো জোটবন্ধ হয়ে কোনও প্রার্থী দিতে না পারে।

আগের বার বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে প্রার্থী করেছিল বিরোধীরা। আদতে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী। সিংহভাগ বিরোধী দল তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিল।

নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ’রা এবার তাই চাইছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে কোনওভাবেই যেন কংগ্রেসের ছাতার তলায় বিরোধীরা জোট বাঁধতে না পারে। তাই রাষ্ট্রপতি ভোটের মাস দেড়েক আগে স্বয়ং সনিয়া ও রাহুলকে ইডির নোটিস পাঠিয়ে তাঁদের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির তদন্তের মুখে থাকা বিরোধী শিবিরের বাকি নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে এক বন্ধনীতে নিয়ে এলেন।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের মুখে যেমন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন যেমনই আছেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, জন্মু-কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ ও ওমর আবদুল্লাহ, বহুজন সমাজবাদী পার্টির মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের লালুপ্রসাদ, তাঁর পুত্র তেজস্বী, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও প্রমুখ।

তৃণমূল, আপ, বিএসপি, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলি বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। বিজেপি মনে করছে সনিয়া ও রাহুলকে এই সময় ইডির নোটিস ধরানোয় বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের প্রভাব আরও খর্ব হবে। অন্য বিরোধীরা কংগ্রেসকে আরও ধুরছাই করে। বিজেপির লক্ষ্য, কংগ্রেস এবং বাকি বিরোধীরা যেন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অভিন্ন প্রার্থী দিতে না পারে। আর এই নির্বাচনে সেটা সম্ভব হলে ২০১৪-এর লড়াইয়ে বিরোধীরা আরও ছন্নছাড়া হয়ে যাবে।

কংগ্রেসের অঙ্ক

সনিয়া ও রাহুলকে দিন কয়েক আগেই নোটিস ধরিয়েছিল ইডি। কংগ্রেস নেতৃত্ব বিষয়টি ফাঁস করার আগে করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে নিয়েছে। কংগ্রেস মনে করছে, রাষ্ট্রপতি ভোটের মুখে সনিয়া, রাহুলকে ইডির নোটিস ধরিয়ে বিরোধীদের বোঝাপড়া আরও সহজ করে দিয়েছে সরকার। মোদী সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে বিরোধীদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, শরদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কে চন্দ্রবাবু নাইডু, পিনারাই বিজয়ন, এমকে স্ট্যালিন, অখিলেশ যাদব, হেমন্ত সোরেন, অশোক গহলতের মতো বিরোধী শিবিরের নেতা, মুখ্যমন্ত্রীরা বারে বারে অভিযোগ করছেন। সেই তালিকায় সনিয়া, রাহুলের নাম যুক্ত হওয়ায় কংগ্রেস মনে করছে তারাও মূল স্রোতে এল। কারণ, বিরোধীদের অনেকেরই অভিযোগ, সম্পত্তি বাঁচাতেই সনিয়া, রাহুলরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধে বেশি দূর পা বাড়ান না। কিন্তু বুধবারের ইডি নোটিস থেকে সনিয়া, রাহুলদের সেই বদনাম কিছুটা হলেও কমবে।

কংগ্রেস নেতারা আরও মনে করছেন, ইডির নোটিসে দলের মধ্যেও গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তা আপাতত ধামাচাপা পড়তে পারে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অগাস্টে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন এবং রাহুল গান্ধী ফের দলের সভাপতি হবেন। তার আগে মা ও ছেলেকে ইডির নোটিস ধরানোর ফলে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি ভুলে দলের পাশে থাকার পরিবেশ তৈরি হবে, মনে করছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

কংগ্রেস শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিতেই নয়, আইনকানুন খতিয়ে দেখেও নিশ্চিত এই মামলায় ইডি সনিয়া, রাহুলকে তলব করে হেনস্তাই করতে পারে মাত্র। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। ফলে ইডির নোটিস একদিক থেকে কংগ্রেস, বিশেষ করে সনিয়া, রাহুল-সহ গান্ধী পরিবারের জন্য শাপে বড় হতে পারে।দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news