মহানবী (সা.) সম্পর্কে বিজেপি নেত্রীর বিরূপ মন্তব্য: বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশে পরপর দ্বিতীয় জুমায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

ওই ইস্যুতে প্রয়াগরাজ, লক্ষনৌ, মুরাদাবাদ এবং সাহারানপুরে হট্টগোল হয় ও বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। আটলায় জুমা নামাজের পর স্লোগান ও হট্টগোল হয়। পুলিশ বাধা দিতে গেলে পাথর নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উত্তেজিত জনতাকে ধাওয়া করে। এরপরও মারমুখী জনতা শান্ত না হলে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। এমনকী পুলিশকে শূন্যে গুলিও চালাতে হয়। পাথর নিক্ষেপের ফলে পুলিশের আইজি রাকেশ সিং-সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। 

আজ (শুক্রবার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান’ সূত্রে প্রকাশ, গোলযোগ সৃষ্টিকারীরা একটি ট্রলিতে আগুন ধরিয়ে দিলে অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়। ডিএম,  এসএসপি এবং সাংবাদিকদেরও পাথরের আঘাত লেগেছে। একটানা দেড় ঘণ্টা ধরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও গোলযোগ অব্যাহত থাকে। জনতা এ সময়ে নুপুর শর্মাকে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।   

একই ইস্যুতে সাহারানপুরে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন আজ ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেন। জুমা নামাজের পর সাহারানপুরের সড়কে নেমে আসা মুসুল্লিরা ১৫/২০ মিনিট মসজিদের বাইরে স্লোগান দেয়। দুপুর ১টায় সাহারানপুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ শুরু হয়। এরপর নামাজ শেষ করে নামাজিরা মসজিদ থেকে বের হলে তারা স্লোগান দিতে থাকেন। হাতে তেরঙ্গা নিয়ে আসা যুবকরাও বিক্ষোভে শামিল হন। কর্মকর্তারা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান।  

আজ দেওবন্দের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার সমস্ত মার্কেট বন্ধ ছিল। রশিদিয়া মসজিদে জুমা নামাজের পর আচমকা কিছু লোক সড়কে নেমে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর পুলিশের কথা না শোনায় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পরিবেশ অশান্ত করার অভিযোগে ৬/৭ জনকে আটক করে পুলিশ।   

মুরাদাবাদে জুমা নামাজের পর আচমকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। নামাজ শেষে একদল যুবক মিছিল করে নূপুর শর্মার গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। শুক্রবার জুমা নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন। এ সময়ে লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  

পশ্চিমবঙ্গে আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে অবরোধ হয় হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া, ধুলাগড়সহ বিভিন্ন জায়গায়। এর পাশাপাশি শুরু হয় রেল অবরোধ। বম্বে রোডের কুলগাছিয়া, পীরতলায় অবরোধের জেরে আটকে পড়ে বহু গাড়ি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশও এ সময়ে পাল্টা লাঠিচার্জ করে। হাওড়ার নিমদিঘি এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুর ২টা থেকে দফায় দফায় অবরোধে আটকে পড়ে যাত্রীবাহী অসংখ্য যানবাহন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে,  রেলপথেও অবরোধ করা হয়। হাওড়ার বাগনান, ফুলেশ্বর, চেঙ্গাইল-সহ একাধিক স্টেশনে দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হওয়ায় জরুরি কাজে আটকে পড়েন অনেকেই।।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news