এক নেতার দুই পার্টি, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর বিচিত্র ভাবনার পিছনে মতলবটা কী

 তেলেঙ্গানার (Telengana) মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (KCR) রাজনীতিতে নতুন ভাবনার কথা শোনালেন। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (TRS) সুপ্রিমো কেসিআর তাঁর দলকে জানিয়েছেন, ভারত রাষ্ট্র সমিতি কিংবা নবভারত পার্টি, এর যে কোনও একটি নামে তিনি একটি সর্বভারতীয় দল গড়তে চলেছেন। সেই দলের লক্ষ্য হবে জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। কেসিআর তাঁর এই ভাবনার কথা জানাতে মন্ত্রিসভা এবং দলের রাজ্য কমিটির বিশেষ বৈঠক ডেকেছিলেন হায়দরাবাদে। তার আগে টানা তিন দিন ছিলেন শহরের বাইরে তাঁর বাগান বাড়িতে। হায়দরাবাদে ফিরে প্রথম কর্মসূচি ছিল ওই বৈঠক। সব নেতা ও মন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল, বৈঠকে থাকতেই হবে। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাক বৈঠকে থাকা বাধ্যতামূলক। অনেকেই ভেবেছিলেন, পাশের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের মতো তিনিও মন্ত্রিসভা পুরো রদবদল করবেন। অথবা মুখ্যমন্ত্রীর ভার ছেলের হাতে তুলে দেবেন।

কিন্তু বৈঠকে তিনি তাঁর এই ভাবনার কথা জানান, যা ভারতীয় রাজনীতিতে নজিরবিহীন। (তেলেঙ্গানার এখন আর্থিক অবস্থা কেমন?)

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী সেই বৈঠকে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন (Presidential Election) এবং ২০২৪ এর লোকসভা ভোট নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি বা টিআরএস তেলেঙ্গানার স্বার্থবাহী একটি রাজনৈতিক দল। যার জন্ম হয়েছিল তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে। কেসিআর ব্যাখ্যা করেন, রাজ্যের দাবিতে তৈরি দল নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। তাই একটি সর্বভারতীয় দল করা দরকার।

 কেসিআরের এই ভাবনার কথা জানাজানি হতে রাজনৈতিক মহলে তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কারণ নজিরবিহীন এই ভাবনা কীভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কেসিআর পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে বেশ সক্রিয়। তিনি একাধিক নেতা এবং অবিজেপি শাসিত রাজ্য সফর করেছেন। কথা বলেছেন একাধিক নেতা-নেত্রীর সঙ্গে।

তাঁর শর্ত একটাই, বিরোধী প্রার্থী যেন কংগ্রেসের পছন্দের লোক না হয়। তবে তাঁর দল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই তেলেগু নেতা আসলে অপেক্ষা করছেন কবে অন্য দলের কোনও নেতা বা মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করেন। এই ব্যাপারে বরং তিনি ও তাঁর দল খানিক হতাশ। তাঁরা আশা করেছিল, বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর লাগাতার জেহাদের কারণে এতদিনে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসবে। কিন্তু সে পথে পা বাড়ায় নি কোনও দলই।

জানা যাচ্ছে, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর কৌশল হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিশ্চিত হার জেনেও তিনি লড়তে চান আসলে ২০২৪- কে মাথায় রেখে। তাঁর আশা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী হতে পারলে পরের লোকসভা ভোট নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি হয়ে উঠবেন বিরোধী শিবিরের অভিন্ন মুখ। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে পা রাখার উদ্দেশ্যে পৃথক একটি দল গঠন করার ভাবনা নিয়ে এগতে শুরু করেছেন। সেই দলে গোটা দেশের মানুষ থাকবে এবং রাজ্যে রাজ্যে ইউনিট হবে।

 

রাজনৈতিক মহল অবশ্য কেসিআরের এই ভাবনাকে খুবই বিচিত্র মনে করছে। তার কারণ আর একটি দল গড়লেও তাঁর পক্ষে সেই দলের মাথায় বসা সহজ হবে না। কারণ নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুটি দলে পদাধিকারী থাকতে পারেন না।

তবে টিআরএস নেতার ভাবনা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন তিনি হয়ে যাবেন সর্বভারতীয় দলের প্রধান। আর তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির মাথায় বসবেন তাঁর পুত্র। একই সঙ্গে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারও ছেলের হাতে তুলে দিতে চান তিনি।

তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না করা পর্যন্ত এ ব্যাপারে এখনই এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। যদিও রাজনীতিতে এমন ভাবনার কোনও নজির কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। তবে ভাবনাটি সব আঞ্চলিক দলকেই ভাবাচ্ছে সন্দেহ নেই। কারণ বিজেপি এবং কংগ্রেস আঞ্চলিক দলগুলিকে সুযোগ পেলেই এই ইস্যুতে আক্রমণ করে থাকে। তাদের বক্তব্য আঞ্চলিক দলগুলি আঞ্চলিকতাবাদের শিকার। বিজেপি তো নিজেদের সরাসরি রাষ্ট্রবাদী দল দাবি করে। অন্যদিকে এই শব্দটি ব্যবহার না করলেও কংগ্রেস বরাবর সর্বভারতীয় দল হিসেবেই গর্ব করে থাকে। খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news