আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় পূজা করে আসছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাশাপাশি মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডা ও মন্দির অবস্থানের নজির রয়েছে এবং এসব ধর্মীয় উপসানালয়ে যার যার ধর্ম পালনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে। তবুও ভারতীয় অনলাইন মিডিয়া মিন্ট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পূজার সময় নামাজের জন্যে নীরবতা বজায় রাখতে নাকি জিজিয়া কর দিতে হচ্ছে।
মিন্ট’এর প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হচ্ছে আগস্টের পর সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিবেদনগুলি দুর্গাপূজা উদযাপনের উপর বিধিনিষেধের ইঙ্গিত দেয়, যার মধ্যে অর্থ প্রদানের দাবিতে হুমকি এবং প্রার্থনার সময় বাদ্যযন্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাস্তবে এধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা নয় বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে যার যার ধর্ম যাতে পালন করতে পারে সে কারণে আযানের সময় পূজার ঢাক ঢোল বা মাইক বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে মাত্র। আর সারা বাংলাদেশে এধরনের ধর্মীয় উপাসনা বা নামাজ অনায়াসে এবং বাধাহীনভাবে আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো বাদানুবাদের প্রশ্নও ওঠে না।
কিন্তু বাংলাদেশের ডেইলি স্টার অনলাইন ও ঢাকা ট্রিবিউনে পূজার সময়ে চাঁদাবাজীর দুটি খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে মিন্ট’এর প্রতিবেদনে বিষয়টিকে উপস্থাপিত করা হয়েছে জিজিয়া কর হিসেবে। সুকৌশলে ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে ধর্মীয় উম্মাদনার একটা খোলস পড়াতেই এধরনের প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশি মিডিয়ার ওই চাঁদাবাজীর খবরকে রং চড়িয়ে বলা হচ্ছে পূজা আয়োজক কমিটিগুলিকে নামাজের সময় নীরবতা বজায় রাখতে এবং ‘জিজিয়া’ হিসাবে প্রত্যেককে ৫ লাখ দিতে বলা হয়েছিল। দেশ জুড়ে প্রতিমা ভাংচুর ও লুটপাটের একাধিক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে হিন্দুদের মন্দির প্রহরায় ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যাক প্রতিবেদনটি শেষ করা হয়েছে, প্রশাসনের সিনিয়র সদস্যরা অবশ্য জোর দিয়েছেন যে উপাসকদের বাংলাদেশে উৎসব উদযাপনের ‘অবশ্যই’ সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন এএনআই-এর সাথে সাম্প্রতিক আলাপচারিতার সময় জোর দিয়ে বলেছেন, ‘এটা বেশ অদ্ভুত। এদেশে যুগ যুগ ধরে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে এবং দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়নি এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। নিঃসন্দেহে পূজারীরা তা করার সুযোগ পান। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।’
অদ্ভুত হচ্ছে বাংলাদেশে পূজার সময় ‘জিজিয়া কর’ দেবার কাল্পনিক তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরির বিষয়টি।