অসমে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২, নিখোঁজ ৭
ভারতের অসমে চলতি বছরে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ লাখ মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ হয়েছেন ৭ জন।
রাজ্যের ৮১০ টি ত্রাণ শিবিরে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮১৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগের কারণে মোট ১ লাখ, ১৩ হাজার ৪৮৫.৩৭ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে জেলার বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক তলিয়ে গেছে।
অসমের করিমগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে কারণ কুশিয়ারা, লংগই এবং সিংলা নদীর বন্যার পানি জেলার আরও এলাকাকে প্লাবিত করায় জেলার ১.৩৪ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এএসডিএমএ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে কমপক্ষে ১১ হাজার ২৯২ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত জেলার সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে কাছাড় জেলার শিলচর শহর। এতে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে লোকজনকে নৌকায় চড়তে দেখা গেছে।
এ সময় গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বন্যা কবলিত এলাকার ৫০ বছর বয়সী সবিতা কুমারী দাস বলেন, তার জলমগ্ন বাড়ির সামনে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী দিয়েই এই দিনগুলোতে পেট ভরতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার ঘর গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। সরকারের দেওয়া রেশন থেকে ২ বেলা রুটি পাচ্ছি। গতকাল ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমোতে হয়েছিল। বড্ড কষ্ট হচ্ছে, এই যন্ত্রণার বর্ণনা কী করে দেব? সরকার আমাদের সামান্য রেশন দিচ্ছে, তা থেকে আমাদের খাওয়া চলছে। অন্য সবকিছু নষ্ট গেছে।
বন্যার আরেক ভুক্তভোগী বলেন, বাড়ির প্রথম তলা তলিয়ে গেছে। আমি ৪ দিন থেকে রাস্তায় একটি তাঁবুর নিচে সময় কাটাচ্ছি। সরকারের কাছ থেকে যা পাই তাই খাই কারণ এখন ঘরে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
ত্রাণসামগ্রী সম্পর্কে নিজের কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, নেতারা আসেন, নেতারা যান, কিন্তু ত্রাণের নামে যা কিছু দেন, তাতে আমাদের কোনো কাজ হয় না। কখনো লবণ পাওয়া যায় তো কখনো চাল পাওয়া যায় না। কখনো ডাল পাওয়া যায় তো তেল পাওয়া যায় না। আমাদের যে টারপলিন দেওয়া হয় তা প্রবল বাতাসের ফলে ফেটে যায়। অনেকে এটাও পায়নি। নেতারা কেবল গণনা করেই চলে যান। তাদের কাছে আমরা শুধুই পরিসংখ্যান।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, আমাদের সরকারের কাছে সুপেয় পানি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। টয়লেটের ব্যবস্থা করা হোক। এখানকার পানি এতটাই নোংরা যে রোগের আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। আমরা পানি পান করতে পারি না বা টয়লেটে যেতে পারি না, তাহলে ভেবে একটু দেখুন আমাদের এলাকার নারীদের অবস্থা কী হবে?
বন্যার সময় অনেকেই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। ভুক্তভোগী রোকাইয়া বিবি জানান, গত চারদিন ধরে আমরা এখানে আছি। এত দারিদ্র আর এত কষ্টের মধ্যে খাওয়ার কিছু নেই, চোখের পানিও থামছে না। আমার ঘর ভেসে গেছে, তাই হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।
শান্তা নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তার গরু, বাছুর ও দু’টি ছাগল ভেসে গেছে। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। হাসপাতালে থাকতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
শোমা বলেন, আমি হাসপাতালের বেডে বসে আছি কারণ আমার বাড়িতে এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমাকে আমার ছোট সন্তানের সাথে এখানে থাকতে হচ্ছে। অনেক কষ্ট হয়। বাচ্চার খাওয়ার কিছু নেই। কখনও মশা আবার কখনও নোংরা, শিশুদের খাওয়ানোর মতো কিছুই নেই। হাসপাতালে খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে স্ট্রেচার ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়াও হাসপাতালে অনেক শিশু ছিল যারা আহত হয়েছিল কিন্তু তাদের জন্য টিটেনাস এবং অন্যান্য ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া যায় না। যার ফলে শিশুদের উদ্ধার করে একটি নৌকায় করে মেডিকেল ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাদের অন্যান্য ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আসামের বর্তমান পরিস্থিতি করুণ ও উদ্বেগজনক।।খবর পার্সটুডে /এনবিএস/২০২২/একে