গুজরাট দাঙ্গা : সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদ ও অন্যদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানালো সিপিআইএম
গুজরাট দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের সাবেক এমপি এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বস্তি দেওয়ার পর গতকাল (শনিবার) গুজরাট পুলিশের অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড (এটিএস)ওই মামলার অন্যতম আবেদনকারী সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেফতার করেছে।
সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, নাগরিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন যারা, তাদের নিপীড়ন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো বন্ধ করুন। তিস্তা শীতলাবাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করুন এবং তাকে মুক্তি দিন।’
গুজরাট গণহত্যা নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালানোর অভিযোগ এনে সমাজকর্মী তিস্তা শীতলাবাদ, সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা আরবি শ্রীকুমারের বিরুদ্ধে আহমদাবাদে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ইনস্পেক্টর দর্শনসিং বি বারাডের দায়ের করা এফআইআরে এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৪৬৮, ৪৭১, ১২০(বি), ১৯৪ ও ২১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত শুক্রবার বিচারপতি এএম খানউইলকারের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ২০০২ গুজরাট দাঙ্গায় জাকিয়া জাফরির বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ গুজরাট দাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। সেই ক্লিনচিটকে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের সাবেক এমপি এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। তিনি সিটের ক্লিনচিটকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযোগ করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী গুজরাট দাঙ্গার সময় সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলায় অন্যরা দোষী সাব্যস্ত হলে মোদী কেন হবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন জাকিয়া জাফরি।
আজ (রোববার) সিপিআইএমের পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০০২ সাল থেকে গুজরাট গণহত্যার প্রসঙ্গে ন্যায়বিচারের দাবীতে নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া তিস্তা শীতলবাদ’কে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে পলিটব্যুরো। তার গ্রেফতারি কার্যত সবাইকে হুমকি দেওয়া যারা কোনও সরকার কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অপদার্থতায় ঘটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে এ এক ঘৃণ্য আক্রমণ।
সিপিআইএমের পলিট ব্যুরো বলেছে, ‘সংশ্লিষ্ট ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ যে অদ্ভুত রায় দিয়েছে তার প্রভাবেই গুজরাট প্রশাসন এই গ্রেফতারি চালিয়েছে। রায়ে আদালতে আবেদনকারীদেরই অপরাধী সাব্যস্ত করে বলা হয়েছে, ‘বিচারব্যবস্থার অসাধু ব্যবহারকারী প্রত্যেককেই কাঠগড়ায় তুলতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হবে। এহেন রায়ের অর্থ হবে কেউই আদালত নির্ধারিত ‘সিট’-এর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না যেমন এই ঘটনায় জাকিয়া জাফরি ও তিস্তা শীতলবাদ করেছিলেন। আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ব্যাপী এদের লড়াইকে তাচ্ছিল্যের সাথে ‘মনগড়া ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রান্না চাপানো’ বলে দাগিয়ে করা হয়েছে।’
‘এই রায়ে তিস্তা শীতলবাদের মতো যারা দেশের বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থাশীল তাদেরকেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই মামলা কিউরেটিভ পিটিশনের জন্য উপযুক্ত। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে তিস্তা শীতলবাদ, শ্রীকুমারসহ অন্যদের সিপিআইএমের পলিট ব্যুরো মুক্তির দাবী জানাচ্ছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।খবর পাসটুডে/এনবিএস/২০২২/একে


