কী কাণ্ড! বিজেপির ভয়ে বিধায়কদের নিয়ে জলে নেমে পড়েছেন হেমন্ত সরেন!

 শনিবাসরীয় বিকেলে একটি ছবি গোটা দেশে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তা হল জেএমএম ও কংগ্রেসের বিধায়কদের নিয়ে জলে নেমে পড়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন (Hemant Soren)। দেখা যাচ্ছে, দিগন্ত বিস্তৃত এক হ্রদে নৌকোয় বসে রয়েছেন হেমন্ত ও বিধায়করা। তাঁদের সবার পরনে লাইফ জ্যাকেট।

এই লাইফ জ্যাকেট যেন প্রতীকী হয়ে উঠেছে (Jharkhand Political Crisis)। ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-কংগ্রেস সরকারকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন হেমন্তের কাছে চ্যালেঞ্জ। কারণ, বিজেপি জুজু। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, বিজেপি টাকা নিয়ে বিধায়ক কিনতে নেমেছে। ঠিক যেভাবে মহারাষ্ট্রে সরকার ভেঙেছে, সেভাবেই ঝাড়খণ্ডেও ভাঙার খেলায় নেমেছে।

হেমন্ত একা নন। দেশজুড়ে তামাম বিরোধী দল এখন বিজেপিকে এরকমই জুজু হিসাবে যেন দেখছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরাসরি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ২৭৭ জন বিধায়ক কিনেছে। এ জন্য খরচ করেছে আনুমানিক ৫৫০০ কোটি টাকা।

দিল্লিতে যখন কেজরিওয়াল একথা বলছেন, তখন ঝাড়খণ্ডে হেমন্তদের সংকটটা প্রকট ভাবেই ধরা পড়েছে। এদিন সকালে দেখা যায় বিলাসবহুল দুটি বাস রাঁচি থেকে বেরিয়ে হাইওয়ে ধরে ছুটছে। সামনে পুলিশের এসকর্ট কার। পিছনেও পুলিশি প্রহরা। সঙ্গে ভিভিআইপি বুলেট প্রুফ কার। ঝাড়খণ্ডের শাসক জোট ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, এবং কংগ্রেসের ৪৮ জন বিধায়ককে নিয়ে বাস দুটি গোপন কোনও ডেরায় যাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসক জোটের বিধায়কদের রাঁচি ছেড়ে যাওয়ার কারণ, বিজেপির থাবা এড়ানো, ঝাড়খণ্ডে মহারাষ্ট্রের পুনরাবৃত্তি আটকানো। যদিও জেএমএম-কংগ্রেস জোটে এখনও কাউকেই একনাথ শিণ্ডে বলে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে গত মাসে এ রাজ্যে হাওড়া পুলিশের হাতে ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের তিন বিধায়কের ৫০ লাখ টাকা সহ ধরা পড়ার ঘটনায় প্রমাদ গুনছে দেশে টিকে থাকা একমাত্র ইউপিএ সরকার। কংগ্রেস ছাড়াও জেএমএমের সঙ্গে জোটে আছে এনসিপি এবং সিপিআইএমএল-লিবারেশন।

ঝাড়খণ্ডে বিজেপি অপারেশন লোটাস সফল করে তুলতে অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত শাসক জোটে কোনও ভাঙনের আভাস নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন ঝুঁকি নিতে নারাজ। কারণ, আজকালের মধ্যেই তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বে আপাতত ইতি পড়বে। লাভজনক পদে থাকার মামলায় নির্বাচন কমিশন তাঁর বিধায়ক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রাজ্যপালকে পাঠিয়েছে দিন দুই আগে। রাজ্যপাল কমিশনের সিদ্ধান্তে সায় দিয়ে আজ শনিবার তা দিল্লি পাঠিয়ে দিয়েছেন। যে কোনও মূহূর্তে সরেনের বিধায়ক পদ বাতিলের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে কমিশন।

কমিশন দু’ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক, সরেনের বিধায়ক পদ বাতিলের পাশাপাশি কয়েক বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। দুই, শুধু সদস্য পদ থারিজ করতে পারে। সরেন আপাতত ইস্তফা দিয়ে ফের শপথ নিয়ে অন্তত ছয় মাস মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেন। ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে কোনও আসন থেকে জিতে আসতে হবে।

কিন্তু কমিশন যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সরেন মুখ্যমন্ত্রীর গদিহারা হওয়া মাত্র বিজেপির দল ভাঙানোর খেলা শুরু হতে পারে বলে জেএমএম আশঙ্কা করছে। এমনকী নিজের রাজ্য ঝাড়খণ্ডকেও পুরোপুরি নিরাপদ মনে করছেন না মুখ্যমন্ত্রী। ফলে কমিশনের ঘোষণা এবং তারপর তাঁর নিয়ন্ত্রাধীনে নতুন সরকার গঠন, সেই সরকারের আস্থা ভোট না হওয়া পর্যন্ত বিধায়কদের চোখে চোখে রাখতে চাইছেন তিনি।খরব দ্য ওয়ালের /  এনবিএস/২০২২ /একে

news