পশ্চিমবঙ্গে কুড়মি জাতিকে তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত করার দাবিতে সড়ক অবরোধ: দুর্ভোগ

কুড়মি জাতিকে তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত করা ও কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে রেল ও সড়ক অবরোধে দুর্ভোগ।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কুড়মি জাতিকে তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত করা এবং কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ৪ দিন ধরে একটানা রেল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন কুড়মিরা।  

গত (মঙ্গলবার) থেকে ছোটনাগপুর কুড়মি মাহাতো সম্প্রদায়ের আহ্বানে জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। আজ শুক্রবারও সেই আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।   

এ প্রসঙ্গে আজ বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ এমপি বলেন, ‘ওই আন্দোলনের পিছনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের হাত আছে। সারা দেশ এগোচ্ছে, দেশের অর্থনীতি এগোচ্ছে। তাকে আটকানোর জন্য, মোদিকে বদনাম করার জন্য চক্রান্ত চলছে। সাধারণ মানুষ বুঝবেন যে, এতে কার ক্ষতি হচ্ছে। রাজনীতি করার একটা সীমা থাকা উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এমপি। 

অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন এমপি পাল্টা জবাবে বলেন, ‘রেল অবরোধ হয়েছে। রেল ভারত সরকারের অধীনে পড়ে, রাজ্য সরকারের অধীনে নয়। রেল দফতর নবান্ন অভিযানের সময়ে কম পয়সায় রেল ভাড়া দিতে পারে, ‘আরপিএফ’ বিজেপির গুণ্ডাদের আশ্রয় দিতে পারে, আর তারা রেল অবরোধ তুলতে পারছে না, সেটা তো রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হতে পারে না।’ পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বিজেপির মন কোনোদিনই কাঁদেনি বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন।     

কুড়মিদের বিক্ষোভ-আন্দোলনের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যবর্তী খেমাশুলি এলাকা। পুরুলিয়ায় রেল অবরোধ কর্মসূচি পালন করা ছাড়াও মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে সড়ক অবরোধ করা হয়। আন্দোলন চলবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন কুড়মি নেতা অশোক মাহাতো।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কয়েকদফায় বৈঠক করেও কোনও ফল হয়নি। জেলাপ্রশাসক আয়েশা রানি বলেন, ‘কুড়মি সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। আন্দোলন তুলে নেওয়ার জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের সমস্ত দাবি সনদ আমরা রাজ্যের কাছে পাঠাব বলেও জানানো হয়েছে।’  

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া কুড়মালি আন্দোলনের জেরে আজ শুক্রবার রেলের দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় বাতিল করা হয়েছে আপ ও ডাউন মিলিয়ে ৪০টি ট্রেন। বেশ কয়েকটি ট্রেনের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। রুট সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে আরও কয়েকটি ট্রেনের। বাতিল হওয়া ট্রেনের মধ্যে আছে, টাটানগর-খড়গপুর স্পেশাল, টাটানগর-হাওড়া স্টিল এক্সপ্রেস,  ঝাড়গ্রাম-ধানবাদ এক্সপ্রেস, টাটানগর-দানাপুর এক্সপ্রেস, টাটানগর-আসানসোল স্পেশাল, হাওড়া-বড়বিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, চক্রধরপুর-টাটানগর এক্সপ্রেসসহ ৪০টি ট্রেন।   

পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলি স্টেশনে একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে অবরোধ চালাচ্ছেন কুড়মিরা। খেমাশুলি ৬ নম্বর জাতীয় সড়কেও চলছে অবরোধ। এর জেরে চারদিন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। এতদিন আটকে থাকায় বাস ও ট্রাক চালকদের অভিযোগ, অনেক টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে পানি ও খাবার। ঠিকমত খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চালক ও কর্মীরা। খেমাশুলিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় কয়েক কিলোমিটার ধরে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ট্রাক।

খবর পার্সটুডে /এনবিএস/২০২২/একে

news