ভারতে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ কার্যকরের চেষ্টা শুরু, বিজেপি’র বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জেডিইউ
ভারতের বিহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) নিয়ে বিজেপি-জেডিইউ-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। রাজ্যটিতে জেডিইউ–বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যে গোটা দেশের জন্য ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড আইন সংসদে আনতে চায়। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে সব ধর্মের মানুষ একইরকম পারিবারিক, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধি মানতে বাধ্য হবেন। তাছাড়া অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে মুসলিমদের শরীয়াহ আইন বা পার্সোনাল ল’য়ের অস্তিত্ব থাকবে না। সংখ্যালঘু সমাজ ও বিরোধীরা এ নিয়ে প্রতিবাদে নামলে তাকে পুঁজি করে নির্বাচনের আগে মেরুকরণের তাস খেলার সুযোগ পাবে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক আজ (সোমবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘গোয়াতে হিন্দু কোড আইন আছে। তার কী হবে? ভারতে ২২০ টা জনজাতি আছে, তাদের নিজেস্ব সমাজবিধি আছে। তার কী হবে? দক্ষিণ ভারতে মামার সঙ্গে ভাগ্নির বিয়ে দেওয়ার প্রথা আছে তাহলে তার কী হবে? অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নাম করে তাহলে ওরা কী করতে চাচ্ছেন?’
তিনি বলেন, ‘এতবড় দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ভারতে আসেনি। এত বেকার বৃদ্ধির সরকার, এত মূল্যবৃদ্ধির সরকার আসেনি। জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা লুঠেরা সরকার চলছে। তারা নিজেদের দোষ গোপন করার জন্য মুসলিমদের একমাত্র শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হিজাব, তালাক ইত্যাদি প্রসঙ্গ আনছেন, এসব বেশিদিন চলবে না। ওরা ২০২৪ সালে ভারতকে জোর করে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম করতে চাচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক ড. ইমানুল হক।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর রায় এমপি বলেছেন, ‘বর্তমানে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে দু’শোর বেশি জনজাতি তাদের নিজস্ব আইন মেনে চলেন। ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ চালু হলে কোপ পড়বে তাতেও। ওই আইন সমাজকে যতটা ঐক্যবদ্ধ করবে, তার চেয়ে বেশি বিভাজন ঘটাবে।’
আসলে, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে অভিন্ন দেওয়নি বিধির দাবি রয়েছে এবং বিজেপির অনেক মুখ্যমন্ত্রীকেও এতে সম্মত হতে দেখা যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের পর উত্তর প্রদেশের সরকারও অভিন্ন দেওয়নি বিধি কার্যকর করার মেজাজে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ড সরকার এরইমধ্যে রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসময়ে, বিহারে বিজেপির অনেক বড় নেতা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার পক্ষে কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি বিহারের ভোজপুরের জগদীশপুরে বীর কুনওয়ার সিংয়ের বিজয়োৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
এ সময়ে বিজেপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যসভার এমপি সুশীল মোদী ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন, জেডিইউয়ের পক্ষ থেকে যার প্রতিক্রিয়া এসেছে।
সুশীল মোদী বলেছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে হবে। জেডিইউ সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি উপেন্দ্র কুশওয়াহা বলেছেন, ‘দেশ সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয় এবং তা দ্বারাই চলবে। বিহারে যদি ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রয়োজন না থাকে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে? নীতীশ কুমার সরকারের অধীনে বিহারে এটা সম্ভব হবে না। জেডিইউ তার নীতির সাথে আপস করতে পারে না।’
বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, সম্প্রতি ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার সময় বলেছেন, ‘সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দাবি বাড়ছে এবং উত্তর প্রদেশ সরকারও এটি বিবেচনা করছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির রাষ্ট্র ও দেশের জন্যও প্রয়োজনীয় এবং আমরাও এর সমর্থনে আছি।
পাঁচটি রাজ্যের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে উত্থাপন করেছিল। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এর খসড়া তৈরির জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই কমিটিতে আইনজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও সমাজের বুদ্ধিজীবীরা থাকবেন।খবর পার্সটুডের/এনবিএস/২০২২/একে