গুজরাতে কেজরিওয়ালের মুখে রাম মন্দির, গো-মাতা, আজ ময়দানে মোদীও
‘আমি ভগবান হনুমানের ভক্ত। ক্ষমতায় এলে আমাদের সরকার বয়স্কদের নিখরচায় অযোধ্যায় রামমন্দির দর্শন করাতে নিয়ে যাবে। যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়া, সব খরচ বহন করবে সরকার। আমরা ক্ষমতায় এলে গরু প্রতি গৃহস্থদের দৈনিক ৪০ টাকা করে দেব।’
গুজরাতে (Gujarat) বিধানসভা ভোটের প্রচারে বলছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। সভার পর সভায় জয় শ্রীরাম (Jai Shri Ram), জয় হনুমান, জয় শ্রীকৃষ্ণ বলে স্লোগান দিচ্ছেন তিনি। সব মিলিয়ে আপ যেন বিজেপির বি-টিম। অবশ্য কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের অনেক দলই বলে আসছে, আপ আসলে বিজেপিরই আর একটি রূপ। বিজেপির মতো হিন্দুত্বই তাদের মূল অ্যাজেন্ডা। সেই কারণে, দিল্লি-সহ সর্বত্র বিজেপি ও আপের এখন সাপে-নেউলে সম্পর্ক।
গুজরাতে ভোটের প্রচারে কেজরিওয়াল হিন্দুত্বের ফেরিওয়ালা হতেই তৎপর হয়েছে বিজেপি। হিন্দুত্বের কপিরাইট আঁকড়ে থাকতে কেজরিওয়ালের যাতায়াতের পথে পাল্টা সভা, স্লোগান তুলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে মুসলিম দরদী প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির। নামাজি টুপি পরা কেজরিওয়ালের ছবিতে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তার দু-পাশ। বিজেপি সমর্থকদের পাল্টা মিছিল, পথসভার জেরে গতকাল দুটি সমাবেশে কেজরিওয়ালের পৌঁছতে দু’ঘণ্টার বেশি দেরি হয়ে যায়।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মানকে নিয়ে গতকাল দু’দিনের সফরে গুজরাত গিয়েছেন আপ সুপ্রিমো। আজও তাঁর একাধিক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার কথা। আজই আবার তিনদিনের সফরে নিজের রাজ্যে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে আজ রবিবার তুঙ্গে উঠবে বিজেপি ও আপের বিবাদ। কেজরিওয়ালের শনিবারের ঘোষণা নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী কী বলেন সেটাই দেখার। মোদী এবং তাঁর দল এখন ভোট ঘিরে চটকদার সুবিধা ঘোষণার বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টে হওয়া মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যাপারে আদালত ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
কেজরিওয়ালের এই দফার প্রচারে হিন্দুত্ব নিয়ে মরিয়া হয়ে ওঠার পিছনে অবশ্য হঠাৎ তৈরি হওয়া বিশেষ পরিস্থিতি কাজ করেছে। তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারের এক মন্ত্রীর বয়ান। দু’দিন আগে দিল্লির সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাজেন্দ্র পাল গৌতম বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রাজেন্দ্র পাল নিজেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাঁকে নিয়ে একটি ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেটিতে দেখা যাচ্ছে উপস্থিত সকলের সঙ্গে রাজেন্দ্র পাল শপথ নিচ্ছেন যে তাঁরা রাম ও কৃষ্ণ সহ হিন্দু দেব-দেবীকে দেবতা মানেন না। তাঁরা এই দেবতাদের পুজো করবেন না।
আপ মন্ত্রীকে নিয়ে ওই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই ভোটমুখী গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশে আপের বিরুদ্ধে জোরকদমে প্রচারে নামে বিজেপি। শনিবার দু-দলের প্রচার, পাল্টা প্রচার ঘিরে সরগরম ছিল দিল্লি, গুজরাত ও হিমাচল।
বিজেপির মোকাবিলায় কেজরিওয়াল পাল্টা হিন্দুত্বের তাস মেলে ধরেছেন। গুজরাতের দাহোদে একটি জনসভায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল বর্ণনা করেন, কীভাবে তাঁর সরকার দিল্লির বয়স্ক ব্যক্তিদের তীর্থযাত্রায় নিয়ে যায়। কেজরিওয়াল বলেন, ‘আম আদমি পার্টি গুজরাতে ক্ষমতায় এলে ভগবান রামের দর্শন পেতে ইচ্ছুকদের অযোধ্যা সফরের পুরো খরচ বহন করবে।’ তাঁর দাবি, ‘আপ এবার গুজরাতে ক্ষমতায় আসবে, কারণ তাঁরা জনগণ এবং ঈশ্বরের জন্য কাজ করছেন।’
আর একটি সভায় কেজরিওয়াল জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যেই অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। কে কে মন্দির দর্শনে যেতে চান? আপনারা সবাই যেতে চান? কিন্তু সেখানে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া, সব কিছুরই খুব খরচ, তাই না? আর পুরো পরিবার নিয়ে গেলে খরচ আরও বেশি।’ এরপর কথা দেন, ‘গুজরাতে ক্ষমতায় এলে আপ সরকার বিনামূল্যে দর্শনের ব্যবস্থা করবে।’
গরুর যত্নআত্তিতে দিনে ৪০ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণার পাশাপাশি কেজরিওয়াল গুজরাতে ভোটের প্রচারে নিজেকে নিষ্ঠাবান রামভক্ত হিসাবে তুলে ধরতে মরিয়া চেষ্টা চালান শনিবার। তিনি বলেন, ‘দিল্লি থেকে রাম ভক্তদের নিয়ে একটি বিশেষ ট্রেন ছাড়ে। মানুষের যাতায়াত, খাবার ও বাসস্থান সবই বিনামূল্যে। বয়স্কদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়। সফর শেষে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’ কেজরিওয়াল আরও বলেন, ‘বিশেষ ট্রেনটি অযোধ্যা সফর শেষে ফিরে এলে আমি নিজে গিয়ে তীর্থযাত্রীদের ফিরে আসার সময় স্বাগত জানাই।’
গতকাল ভদোদরা ও সুরাতে তেরঙ্গা যাত্রায় অংশ নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে অভিযান শুরুর মুখে বিজেপিকে জবাব দিতে বলেন, ‘আমি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে জন্মগ্রহণ করেছি। ভগবান আমাকে একটি বিশেষ কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন। তা হল, কংসের বংশধরদের নির্মূল করা, যাতে মানুষ দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মুক্তি পায়।’ এরপর টানা ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘জয় শ্রী কৃষ্ণ’ স্লোগান তোলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কংসের পুত্র ও রাক্ষস শক্তি একত্রিত হয়েছে।’
খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে


