সাত সকালে বিগ-বি’র বাড়িতে হাজির ‘নেতাজি’, বিপদ কেটে গেল অমিতাভর
বছর বারো আগে এক সাক্ষাৎকারে অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bacchan) বলেছিলেন, ‘আমার ৪৪ বছরের কেরিয়ারে এমন দুঃসময় কখনও আসেনি। এবেলা-ওবেলা পাওনাদাররা ফোন করছে, বাড়িতে চলে আসছে। কী দুঃসহ দিন গিয়েছে তখন।’
এরপর শুনিয়েছেন সুদিন ফিরে পাওয়ার কাহিনি। ‘একদিন সকালে স্বয়ং নেতাজি আমার বাড়িতে। কল্পনাও করিনি উনি লখনউ থেকে মুম্বইতে আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন।’
নেতাজি মানে মুলায়ম সিং যাদব (Mulayam Singh yadav)। তিনি তখন উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) মুখ্যমন্ত্রী। পরিচিতদের কাছে নেতাজি। মুলায়ম এসেছেন অমিতাভর বাবা একদা এলাহাবাদবাসী জনপ্রিয় কবি হরিবংশ রাই বচ্চনকে রাজ্য সরকারের তরফে সম্মান জানাতে।
ওদিকে, বাজারে দেনার দায়ে অমিতাভ পারলে মুখ লুকোন। তাঁর অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেডকে ‘রুগ্ন সংস্থা’ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিন্যান্সিলায় রিকন্সট্রাকশন’। ফলে সরকারি-বেসরকারি কোনও কোম্পানি টাকা ধার দেবে না এবিসিএল-কে। কংগ্রেস, বিশেষ করে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে অমিতাভর তখন সাপে-নেউলে সম্পর্ক। রাজীবের মৃত্যুর কিছুদিন পরই গান্ধী পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সনিয়ার সঙ্গে সু-সম্পর্ক সব চুকে যায় অমিতাভ কংগ্রেসের হয়ে সরাসরি ভোটের ময়দানে প্রচারে নামতে অস্বীকার করায়। বলিউডে আধিপত্য তখন কংগ্রেস আর শিবসেনার।
উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্র অমিতাভকে বিমুখ করেননি মুলায়ম। অমর সিং’কে এগিয়ে দেন বিগ-বি’র পাশে। অমিতাভকে করে দেন উত্তরপ্রদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। সাহারা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কও তৈরি করে দেন মুলায়মই। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় অমিতাভ-র ব্যবসা। এবিসিএল তুলে দিয়ে তৈরি হয় এবিসি।
রাজনীতিতে অনেকেই বলে থাকেন, মুলায়মের সেদিন বিনা নোটিসে অমিতাভর বাড়ি চলে যাওয়াটা ছিল রাজনীতির কুশলী চাল। গান্ধী পরিবার এবং কংগ্রেসের বচ্চন পরিবারের প্রতি দুর্ব্যবহারের দৃষ্টান্তকে উত্তরপ্রদেশের আম-আদমির সামনে তুলে ধরে ভোটের অনেক অঙ্ক মিলিয়ে দিয়েছেন মুলায়ম। অমিতাভকে রাজি করাতে না পারলেও স্ত্রী জয়া বচ্চন সমাজবাদী পার্টির টিকিটে রাজ্যসভার তিনবারের সাংসদ। কিন্তু একথাও বচ্চন পরিবারের ঘনিষ্ঠরা একবাক্যে মানেন, মুলায়ম-অমর সিং’রা সেদিন পাশে না দাঁড়ালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের এই দীর্ঘদেহী মানুষটিকে দেশবাসীর চোখে বামন হয়ে বাঁচতে হত।
মুলায়ম সিংহের প্রতি বচ্চন পরিবারের তাই এতটাই দুর্বলতা যে সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ধর্ষণ নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য ঘিরে গোটা দেশ যখন নিন্দায় সরব, প্রতিবাদে মুখ খুলেছিলেন দলের আর এক সাংসদ জয়াপ্রদা, তখন রা কাড়েননি জয়া এবং বচ্চন পরিবারের কেউ। অভিনেত্রী জয়া বচ্চনের রাজনীতির কেরিয়ারে ওই একটিই অন্ধকারময় পর্ব। একটি ধর্ষণের ঘটনায় মুলায়ম বলেছিলেন, ‘ছেলেপুলেরা ওরকম একটু করেই থাকে।’
খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে


