উত্তরাখণ্ডে তুষারধসে মৃত সৌরভের খোঁজ মিলেছে শেষমেশ, কাঁচরাপাড়ায় কবে আসবে দেহ
উত্তরাখণ্ডের নেহরু ইনস্টিটিউ অফ মাউন্টেনিয়ারিং (নিম)-এ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়ানক তুষারধস দুর্ঘটনায় (NIM Avalanche Accident) এখনও শোকাচ্ছন্ন সারা দেশের পর্বতারোহী মহল। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন বাঙালিও। তাঁদের মধ্যে কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা সৌরভ বিশ্বাসের দেহ উদ্ধার হয়েছে ঘটনার ছ’দিন পরে, ১০ অক্টোবর। এবার সেই দেহ কবে বাড়িতে আসবে, আজও জানা যায়নি। প্রতীক্ষায় দিন গুনছে পরিবার।
১২ সেপ্টেম্বর উত্তরকাশির নিম-এ অ্যাডভান্সড মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করতে গিয়েছিলেন কাঁচরাপাড়ার ধানকল ডিফেন্স কলোনি এলাকার বাসিন্দা সৌরভ বিশ্বাস। বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করার পরে এই অ্যাডভান্সড কোর্স করতে হয়। অর্থাৎ সৌরভ যে একেবারেই কাঁচা, নতুন পর্বতারোহী ছিলেন, তা নয়। বেসিক কোর্স-সহ কিছু অভিযান করেছিলেন তিনি। তার পরেই গিয়েছিলেন অ্যাডভান্সড কোর্স করতে।
পরিবার সূত্রের খবর, ৪ অক্টোবর সৌরভের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, সৌরভদের অ্যাডভান্সড কোর্সে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আরও অনেক শিক্ষানবীশের সঙ্গে সৌরভ বিশ্বাসও নিখোঁজ হয়ে গেছেন। দ্রৌপোদি কা ডান্ডা-২ নামের একটি শৃঙ্গে আরোহণের জন্য উঠছিল দলটি, সেখানেই বড়সড় তুষারধসের মুখে পড়ে তারা। তারপর থেকে টানা ১০ অক্টোবর অবধি ছেলের কোনও খবর পায়নি সৌরভের পরিবার। প্রতি মুহূর্তই কেটেছে চরম উৎকণ্ঠায়। এখনও কার্যত তাই।
দেহ উদ্ধারের পরে আরও কতদিন লাগে সে দেহ বাড়িতে এসে পৌঁছতে, সেই আশাতেই প্রহর গুনছেন সকলে! সৌরভকে শেষ দেখা দেখার জন্য দিন-রাত এক করে পথ চেয়ে বসে আছে বিশ্বাস পরিবার এবং তাঁদের পরিজনরা।
সৌরভের পরিবারের অভিযোগ, চরম গাফিলতির শিকার হয়েছে তাদের ছেলে। নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিঙের উপর দুর্ঘটনার দায় চাপিয়েছে তারা। প্রশ্ন তুলেছে, ১০ দিন হয়ে গেলেও কেন এখনও ছেলের দেহ বাড়ি পৌঁছনো হল না। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানিয়েছে বিশ্বাস পরিবার।
শুধু তাই নয়, পরিবারের অভিযোগ, এত বড় একটা দুর্ঘটনায় যেখানে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, এখনও দু’জন নিখোঁজ, তখন এই অবস্থায় কী করে পরবর্তী কোর্স শুরু হতে চলেছে ১৮ অক্টোবর থেকে! এমনটা চরম অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি তাদের।
সৌরভ বিশ্বাসের বোন রিয়া বিশ্বাস বলেন, ‘দশ দিন ধরে আমরা নিমে ফোন করেই যাচ্ছি। রোজ খবর নিয়ে যাচ্ছি। বডি মিলেছে কিনা কিছুই জানাতে পারেনি ওরা। সেই ২৩ সেপ্টেম্বর ভাই নিজে ফোন করে বলেছিল, দ্রৌপদীকা ডান্ডা ২-তে উঠতে যাবে ওরা। তার পরে আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। চার তারিখ সকালের দিকে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তার পর বাড়িতে খবর দিতে পারেনি ওরা, নম্বর ছিল না। তার পরে আজ দশ দিন কেটে গেল, এখনও দেহ এল না। জেলাশাসকের অফিস থেকে ফোন করে আমাদের খোঁজ নিয়েছে। পুলিশও এসেছিল বাড়িতে। কিন্তু খবর আমরা কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। ইন্ডিয়ার বেস্ট মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে এই এত বড় বিপর্যয় মেনে নেওয়া যায় না।’
সৌরভের বন্ধু অভিষেক বিশ্বাস বলেন, ‘আজ দশদিন পরে সৌরভের দেহ নীচে এসেছে বলে জানতে পারছি। এত দিন কিছুই বলতে পারেনি নিম। একটা আপডেট দিতে পারছে না ওরা। সৌরভের মা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন, কিছু খাচ্ছেন না। সৌরভ আমাদের তেরো বছরের বন্ধু। আমরা ওর পরিবারকেও কিছু বলতে পারছি না। এখন পোস্টমর্টেম চলছে। এর পরে দেরাদুনে আনা হবে বডি, তার পরে কীভাবে বাড়ি আসবে জানি না। আমাদের ছেলে গেল, আমাদেরই এখন মাথাব্যথা কীভাবে দেহ আনা হবে।’
খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে


